যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে পিছিয়ে থাকলেও রেল স্টেশনে ওয়াইফাই ব্যবহারের নিরিখে দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে হাওড়া।
গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫৬ লক্ষ যাত্রী হাওড়া স্টেশনে ওয়াইফাই পরিষেবা ব্যবহার করেছেন। ব্যস্ততার নিরিখে হাওড়ার পরে নয়াদিল্লি, কানপুর, মুম্বইয়ের কল্যাণ বা পটনার মতো স্টেশন থাকলেও ওয়াইফাই ব্যবহারে তাদের পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শিয়ালদহ। অক্টোবর থেকে সেখানে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ লক্ষ যাত্রী ওয়াইফাই ব্যবহার করেছেন। তার পরে কাছাকাছি রয়েছে নয়াদিল্লি স্টেশন। তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে কলকাতা স্টেশন।
এ রাজ্যে এখন ২৫টি স্টেশনে ওয়াইফাই পরিষেবা রয়েছে। গত ডিসেম্বরের হিসেব বলছে, সেই পরিষেবা ব্যবহারের দৌড়ে হাওড়া-শিয়ালদহের পরে রয়েছে বর্ধমান, আসানসোল, খড়গপুর, ব্যান্ডেল এবং নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। আবার ব্যান্ডেল, নৈহাটির চেয়ে ওয়াইফাই ব্যবহারে অনেকটা পিছিয়ে দুর্গাপুরের মতো শিল্প শহরের রেল স্টেশন। ব্যান্ডেলে যেখানে ৮০ হাজার এবং নৈহাটিতে ৬৮ হাজার যাত্রী ওই পরিষেবা ব্যবহার করেছেন, সেখানে দুর্গাপুরে সংখ্যাটা মাত্র ৪৮ হাজার।
ডিসেম্বরের ঠান্ডায় দার্জিলিং বা ঘুম স্টেশনে যত সংখ্যক যাত্রী ওয়াইফাই ব্যবহার করেছেন, তার তুলনায় অনেক কম যাত্রী ওয়াইফাই ব্যবহার করেছেন দিঘায়। দার্জিলিং এবং ঘুমে যাত্রীদের সংখ্যা যেখানে যথাক্রমে ৯ হাজার এবং ৪ হাজার সেখানে দিঘা আটকে ১৯০০-তে। শিলিগুড়ি জংশনে ২২ হাজার যাত্রী ওই পরিষেবা নিয়েছেন, পুরুলিয়াতে পরিষেবা নিয়েছেন ৩৭ হাজার যাত্রী।
কেন এই পার্থক্য? ভৌগোলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক-সহ একাধিক কারণকে দায়ী করছেন রেলের আধিকারিকেরা। হাওড়ার ২৩টি প্ল্যাটফর্ম থেকে দিনে ৯৭৪টি ট্রেন ছাড়ে। দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের বড় অংশ হাওড়া স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন। ফলে ওয়াইফাই ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিপুল। শিয়ালদহ থেকে দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়লেও রেল কর্তারা বলছেন, স্টেশনের কাছাকাছি বসতি এলাকা থাকায় অনেকে টিকিট কেটে স্টেশনে আসেন শুধু ওয়াইফাই পরিষেবা নেওয়ার জন্য। দার্জিলিং বা ঘুম স্টেশনে যাত্রীরা যতটা সময় অপেক্ষা করেন, দিঘায় সে তুলনায় অপেক্ষা করার সময় কম। ফলে যাত্রী বেশি হলেও ওয়াইফাই ব্যবহার কম।
আসানসোল, বর্ধমান জংশন স্টেশন হওয়ায় যাত্রীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন। আবার নৈহাটি ও ব্যান্ডেলে ট্রেন বদলের জন্য শহরতলির যাত্রীর অপেক্ষা করেন। হাওড়া, শিয়ালদহ, আসানসোল বা বর্ধমানের মতো স্টেশনে যাত্রীরা বিনামূল্যের ইন্টারনেট পরিষেবা নিতে গিয়ে বিনোদনমূলক বিষয়ে খোঁজখবর করার পাশাপাশি ট্রেনের সময় বা যাত্রী পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়েও খোঁজখবর করেন। অন্য দিকে দার্জিলিং, ঘুম বা সেবকে যাত্রীদের আগ্রহ আবহাওয়া এবং ভূগোল নিয়ে।
এখন, দেশে সাতশোর বেশি স্টেশনে ওয়াইফাই পরিষেবা রয়েছে। রেলের আধিকারিকদের মতে, এই পরিষেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা থেকে স্টেশনে যাত্রী সমাগমের ধরন, তাঁদের অপেক্ষার সময় এবং আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। স্টেশনগুলির বাণিজ্যিক সম্ভাবনার আঁচও পাওয়া সম্ভব। ফলে যাত্রীদের বিনামূল্যে দেওয়া নেট-ভোজ ব্যবসার দুয়ার খুলতে পারে বলে মনে করছেন রেল কর্তারা।