ভিড়: তারাপীঠে। নিজস্ব চিত্র
বর্ষশেষ ভিড় বাড়ছে তারাপীঠে। ফি-বছরই এই সময়টায় তারাপীঠে ভিড় থাকে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। তবে এ বার অন্যান্য বছরের তুলনায় পর্যটক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা একটু কম বলেই জানাচ্ছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। এমনিতেই প্রতি শনি ও মঙ্গলবার তারাপীঠের মন্দিরে পুজো দিতে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। এ বার শনি থেকে মঙ্গলবার, বছর শেষ ও বড়দিনের আবহে প্রচুর মানুষ একই সফরে পৌষমেলা ও তারাপীঠ দেখার সুযোগ হাতছাড়া না করে এই পুণ্যস্থানে ভিড় জমিয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনে ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি।
হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২৩ ডিসেম্বর থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করে তারাপীঠের বিভিন্ন হোটেলে। মন্দির চত্বরেও বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। মন্দিরের সেবায়েত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় জানান, শান্তিনিকেতন পৌষ মেলা চলাকালীন তারাপীঠে পর্যটক বাড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ দিন থেকে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পর্যন্ত মন্দির চত্বরে দৈনিক গড়ে ২০-২৫ হাজার লোকের সমাগম হয়। আমাদের ধারণা, এ বার বছরের শেষ দিন ও নতুন বছর শুরুর দিন প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোকের সমাগম হবে।’’
যেমন কলকাতা থেকে আসা হিমাংশু রায় জানালেন, তিনি প্রতি বছর এই সময় আসেন পৌষমেলা দেখতে। মেলা দেখে তারাপীঠে এসে হোটেলে থাকেন। বোলপুরের থেকে কম টাকায় থাকা যায়, পুজোও হয়ে যায়। দুর্গাপুরের বাসিন্দা অনিল বর্মা বুধবার বললেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার পরে স্কুল ছুটি। তাই আমরা তারাপীঠে এলাম। এখান থেকে শান্তিনিকেতন মেলা দেখে আবার তারাপীঠ ফিরে রাত কাটাচ্ছি। দু-এক দিন থেকে এলাকাটা ঘুরব।’’ অসম থেকে এখানে প্রথমবার এসেছেন মল্লিনাথ মল্লিক। তিনি ভাবতেই পারেননি, এ সময় এতটা ভিড় হয় মন্দিরে।
সব মিলিয়ে পর্যটকদের এই ভিড়ের হাত ধরেই তারাপীঠের হোটেল–ব্যবসায়ীদের এখন আক্ষরিক অর্থেই পৌষমাস। তবে, সুযোগ বুঝে এক শ্রেণির মাঝারি ও ছোট হোটেল বা লজে ঘর ভাড়ার টাকা স্বাভাবিকের থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে বলেও পর্যটকদের অভিযোগ। যে ঘরের ভাড়া বছরের অন্য সময় ৮০০, সেটারই দর এখন ১২০০ হাঁকা হচ্ছে বলে দাবি পর্যটকদের একাংশের। এই অভিযোগ মানতে নারাজ হোটেল অ্যাসোসিয়েশন।
এক হোটেলের ম্যানেজার অভিজিৎ ঘোষ জানালেন, অন্যান্য বারের থেকে এ বার পর্যটক একটু কম। তবে বড়দিন থেকে তা বাড়তে শুরু করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য সময় আমাদের হোটেলের ঘর অনুযায়ী ৩০ শতাংশ বুকিং থাকত। সেটা বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সেটা ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ হয়ে যাবে।’’ আর এক হোটেলের ম্যানেজার রঞ্জিত রায় দাবি করেন, ৩০ শতাংশ বুকিং প্রায় ৮০ শতাংশ চলে যাবে বছরের শেষ দু’দিনে। খাবারের হোটেলের এক মালিক জানান, তাঁর হোটেলে প্রতিদিন গড়ে পাঁচশো জন করে খাবার খান। এখন সেই সংখ্যা আটশোর কাছাকাছি চলে গিয়েছে।