বিপজ্জনক: সাঁতরাগাছির যে ফুটব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে রেলিংয়ের হালও এমন। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
বুধবার সকাল সাড়ে দশটা। সাঁতরাগাছি স্টেশনে ঢোকার মুখ থেকেই পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। গোটা ফুট ওভারব্রিজ তো বটেই। প্ল্যাটফর্ম এবং ব্রিজে ওঠার সিঁড়ির ধাপে ধাপে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রেল পুলিশের সঙ্গে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরাও। ভিড় সামলানোর এই আয়োজনের পাশাপাশি ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে’ চলছে লাগাতার ঘোষণা, ‘‘ব্রিজের উপরে কেউ দাঁড়াবেন না।’’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার পরের দিন অর্থাৎ বুধবার ফুটব্রিজে লোক চলাচল নিয়ন্ত্রণে রেলের এই তৎপরতায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন যাত্রীরা। নিত্যযাত্রী মানিক মুখোপাধ্যায় বলেন,‘‘এত দিন কারও হুঁশ ছিল না! এত পুলিশ থাকলে দুর্ঘটনা ঠিক এড়ানো যেত।’’
বুধবার লক্ষ্মী পুজোর ছুটির জন্য অন্য দিনের থেকে ভিড় অনেকটাই কম ছিল। তার উপরে ভিড় সামলাতে পুলিশি তৎপরতা। কিন্তু যাত্রীদের আতঙ্ক কমেনি। এখন তাঁরা ব্রিজের আয়ু নিয়ে শঙ্কিত। যাত্রীদের উত্তরোত্তর চাপ বৃদ্ধিতে ব্রিজ ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন নিত্যযাত্রীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুটব্রিজের রেলিং-এর অবস্থা বেশ খারাপ। কিন্তু রেলিংয়ের লোহার পাত ও জালে ঘেরা অংশ কোথাও কোথাও চিড় ধরে ক্ষতবিক্ষত। ফুটব্রিজের মেঝে থেকে রেলিংয়ের উচ্চতা ফুট দুয়েক। ভিড়ের চাপে বা কেউ অন্যমনস্ক হয়ে রেলিংয়ের ধারে পৌঁছলে কেউ উপর থেকে রেললাইনে পড়েও যেতে পারে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ নিত্যযাত্রী।
স্থানীয়দের একাংশের মত, যখন ওই ব্রিজ তৈরি হয়েছিল তার থেকে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী ব্রিজে যাতায়াত করেন। তাই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা খোদ রেলকর্মীদের একাংশের। স্থানীয় এক বাসিন্দা অমিত বসু বলেন, ‘‘অত ভিড় দেখেও পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটল। এই ব্রিজের অবস্থা বেশ খারাপ। কোনও লোকাল ট্রেন গেলেই পুরো ব্রিজ কাঁপে। যদি কখনও ভেঙে পড়ে তা হলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। রেলের কিছু করা উচিত।’’
স্থানীয়দের তরফে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ব্রিজ চওড়া ও মজবুত করার দাবি জানানো হয়েছে। এ দিন রেলের বেশ কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্তা সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন। তাঁরা কেউ মুখ না খুললেও সেখানে উপস্থিত নিত্যযাত্রীরা দাবি তোলেন, ‘‘ব্রিজ ও সিঁড়ি চওড়া করে আরও মজবুত করতে হবে।’’