ভাঙচুর, মারধরে তপ্ত জেলা

বুধবার দুপুরে রানিগঞ্জ ব্লক অফিসে মনোনয়ন দিতে যান জেমারি পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থী মাধব মাঝি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

সালানপুরের দেন্দুয়ায় রাস্তা অবরোধ সিপিএমের।

মারধর, পাল্টা মারধরের অভিযোগে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বের তৃতীয় দিনে উত্তপ্ত হয়ে উঠল খনি-শিল্পাঞ্চল। কাঁকসা থেকে সালানপুর, গোলমাল বাধল নানা এলাকায়। মনোনয়ন দাখিল করতে জেলা জুড়ে শাসকদল বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ সিপিএম এবং বিজেপি-র। কাঁকসায় তৃণমূল কর্মীদের মারধরের পাল্টা অভিযোগ উঠেছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে।

Advertisement

বুধবার দুপুরে রানিগঞ্জ ব্লক অফিসে মনোনয়ন দিতে যান জেমারি পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থী মাধব মাঝি। তিনি অভিযোগ করেন, ব্লক অফিসে পৌঁছতেই রতিবাটি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপ-প্রধান বিনোদ নুনিয়া সদলবলে তাঁকে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করেন। তাঁর নাক ফেটে যায়। আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। বিজেপি-র আসানসোল জেলা সহ-সভাপতি সভাপতি সিংহ জানান, মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। বিনোদবাবুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এমন কিছু ঘটেনি। মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন দাবি করেন, ‘‘যাদের কোনও জনসমর্থন নেই তাদের কেউ কেন মারধর করবে? ওরা এ সব বলে সহানুভূতি কুড়োতে চাইছে।’’

সালানপুরে এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ আল্লাডি পঞ্চায়েতের দুই সিপিএম প্রার্থী মেহবুব মিঁয়া ও আইনুল মিঁয়া মনোনয়ন দাখিল করতে ব্লক অফিসে যান। অভিযোগ, আইনুলকে ধাক্কাধাক্কি করে বের করে দেওয়া হয়। মেহবুবকে হুমকি দেওয়া হলেও তিনি মনোনয়ন দাখিল করেন। বিকেল ৪টে নাগাদ সিপিএমের জেলা পরিষদের প্রার্থী শিপ্রা মুখোপাধ্যায় আসানসোল থেকে মনোনয়নের নথিপত্র নিয়ে ফিরে দেন্দুয়া বাসস্টপে নামতেই এক দল যুবক ঘিরে ধরে নথিপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বাধা দেওয়ায় তাঁকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়, অভিযোগ শিপ্রাদেবীর।

Advertisement

কাঁকসায় হোটেলে ভাঙচুর। বুধবার

ঘটনাস্থলের অদূরেই সিপিএমের অফিস। সেখান থেকে লোকজন ছুটে এসে আসানসোল-চিত্তরঞ্জন রোড অবরোধ শুরু করেন। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানে হয়। ঘণ্টা দেড়েক পরে অবরোধ উঠলেও সন্ধ্যায় থানা ঘেরাও করা হয়। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। তৃণমূলের সালানপুরের নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি শ্যামল মজুমদারের যদিও বক্তব্য, ‘‘আমাদের এই সব করার প্রয়োজন পড়ে না।’’

আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী জানান, গোলমালের ঘটনায় পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, অভিযোগ খতিয়ে দেখা যাচ্ছে।

কাঁকসায় হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ করেছে বিজেপি ও তৃণমূল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বচসা হয়। তার পরে দুপুরে ২ নম্বর কাঁকসার রাজবাঁধের কাছে জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়েছিলেন বাঁশকোপার চার তৃণমূল কর্মী। অভিযোগ, আচমকাই বিজেপির কয়েকজন কর্মী মোটরবাইকে এসে তাঁদের লাঠি, রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। গুরুতর আহত হন তৃণমূল কর্মী শ্যামপদ বারুই ও পান্নালাল দাস। আশপাশের বাসিন্দারা জড়ো হলে দুষ্কৃতীরা পালায় বলে জানান তৃণমূল কর্মীরা। আহতদের রাজবাঁধে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ দিনই বাঁশকোপায় বিজেপি নেতা মনোহর কোনারের হোটেলে চড়াও হয়ে তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। মনোহরবাবু অভিযোগ করেন, সকালে কাঁকসা বিএলএলআর অফিসে তৃণমূলের কিছু লোকজন তাঁকে হেনস্থা করেন। তার পরেই জনা তিরিশ তৃণমূল কর্মী আচমকা হোটেলে হাজির হয়ে সামনের কাচ, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে পালায়।

তৃণমূল যদিও হোটেলে হামলার কথা উড়িয়ে দিয়েছে। দলের নেতা দেবদাস বক্সী পাল্টা অভিযোগ করেন, এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াতে বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে তাঁদের কর্মীদের মারধর করেছে। বিজেপি নেতা রমন শর্মার যদিও দাবি, ওই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন