‘ছুটিই ছুটি!’ নবান্নে এখন কাজের পাহাড়

শুরু হয়েছিল ১৩ অক্টোবর থেকে, শেষ হবে ১৩ নভেম্বর। ছুটির মরসুম সরকারি দফতরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১০
Share:

নবান্ন। —ফাইল চিত্র।

শুরু হয়েছিল ১৩ অক্টোবর থেকে, শেষ হবে ১৩ নভেম্বর। ছুটির মরসুম সরকারি দফতরে। মাঝে যে ক’টি দিন অফিস খোলা ছিল, বড়কর্তাদের একাংশকে দফতরে পাওয়া যায়নি। কারণ, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে চলে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে। এর মাঝে সরকারি কাজকর্মে আরও বিপদ বাড়িয়েছিল ‘ই-অফিস’ ব্যবস্থা কাজ না করায়। নবান্ন সূত্রের খবর, পুজোর ছুটির পর চার-পাঁচ দিন ‘ই-অফিস’ নাকি খোলেইনি। যার ফলে সরকারি দফতরে কাজের জন্য এসে অনেককেই ফিরে যেতে দেখা গিয়েছে। যদিও নবান্নের কর্তাদের একাংশের দাবি, কোনও কাজ বন্ধ থাকেনি। দফতরের সচিব থেকে সাধারণ কর্মী সকলেই তাঁদের নির্দিষ্ট কাজ করেছেন। তাই আমআদমির ভোগান্তির অভিযোগ ঠিক নয়।

Advertisement

সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গত ১৩ অক্টোবর শনিবার থেকে পুজোর ছুটি শুরু হয়েছিল। লক্ষ্মীপুজো পেরিয়ে অফিস খুলেছে ২৬ অক্টোবর। অনেকে আবার সে দিনটাও ছুটি নিয়ে শনি-রবি কাটিয়ে অফিসে এসেছেন ২৯ অক্টোবর। তার পর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত কাজকর্ম স্বাভাবিক হবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ২৯ অক্টোবর জেলা সফরে কোচবিহারে চলে যান। সফর ছিল ৫ দিনের। সঙ্গে গিয়েছিলেন প্রায় সব দফতরের সচিব। ফলে পুজোর পরে অফিস খুললেও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, মাথাহীন হয়ে চলছে দফতরগুলি। আটকে বহু নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ। আবার আগামী ৬-১১ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অফিস ছুটি থাকবে। এ বার ১৩ নভেম্বর ছটপুজোতেও ছুটি দিয়েছে সরকার।

তবে এ নিয়ে কর্মী মহলের ভ্রুক্ষেপ নেই। শাসক দলের এক কর্মচারী নেতার কথায়, ‘‘বেতন বৃদ্ধি হয়নি, ডিএ পাইনি, ক’টা দিন ছুটি পাচ্ছি, তাতেও সবার নজর।’’ কিন্তু প্রায় মাসখানেক ধরে সব দফতরে যে ভাবে কাজের পাহাড় জমেছে, তাতে সচিবালয়েও অনেকে আক্ষেপ করতে ছাড়ছেন না।

Advertisement

আরও পড়ুন: ছাত্রদের ফের ঘেরাও বন্ধের বার্তা পার্থের

নবান্নে মুখ্যসচিবের অফিসে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি ফাইল আসা-যাওয়া করে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টানা উত্তরবঙ্গে রয়েছেন মুখ্যসচিব। এখন সেই বকেয়া কাজ সারতে হবে তাঁকে। একই অবস্থা স্বরাষ্ট্রসচিবের ঘরেও। যদিও তিনি এ দফায় উত্তরবঙ্গ-কলকাতা যাতায়াত করেছেন। রোজই স্বরাষ্ট্রসচিবকে পুলিশের তরফে ফোনে আড়ি পাতার গুচ্ছ আবেদনে অনুমতি দিতে হয়। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার সরস মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব উত্তরবঙ্গে রয়েছেন। আড়ি পাতার ফাইলে সই করতে পেরেছেন কি না জানি না!’’ সবচেয়ে বেশি ফাইল চালাচালি হয় অর্থ দফতরে। প্রশাসনিক বৈঠকে অর্থসচিব যান না। কিন্তু ছুটির পরে অর্থ দফতরের নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘ই-অফিস’ যে ভাবে বিগড়েছিল, তাতে সমস্যায় পড়েন সকলেই। রাজ্যের এক প্রাক্তন মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘পুজোয় টানা ছুটি বরাবরই থাকে। কিন্তু অফিস খোলার পরে খুব চাপে থাকতাম। এখন শুনছি দুর্গাপুজো আর কালীপুজোর মাঝে সচিবেরা সকলেই উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন।’’

রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সচিব অবশ্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তিনটি জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছেন। সেটাও কম জরুরি নয়।’’ ওই সচিবের কথায়, ‘‘প্রত্যেকেই উত্তরবঙ্গ থেকে কাজ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী-মুখ্যসচিব সঙ্গে থাকায় সিদ্ধান্তগ্রহণ বরং সহজে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন