ক্ষণিকের শান্তি। শনিবার ধর্মতলায় সুমন বল্লভের তোলা ছবি।
আচমকাই বদলে গেল হাওয়া!
এই সে দিনও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশেই ছিল কলকাতার তাপমাত্রা। মাঝেমধ্যে টিপটিপ বৃষ্টি আর মেঘলা আকাশের দেখা মিলছিল। বর্ষা-বর্ষা আমেজটা ছিল। কিন্তু শুক্রবারের গরমে সে সব আধা-বর্ষার স্মৃতি উধাও হয়ে গিয়েছে! এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়ে তাপপ্রবাহের বার্তা নিয়ে এসেছে!
শুধু কলকাতাই নয়, হাঁসফাঁস গরমে অস্বস্তি বাড়ছে দক্ষিণবঙ্গের আরও পাঁচ জেলা— পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম এবং বর্ধমান শিল্পাঞ্চলের। আর এই গরমের দোসর হয়েছে বায়ুমণ্ডলের নিচু স্তরে থাকা জলীয় বাষ্প। বাড়তি আর্দ্রতায় ঘেমে-নেয়ে বেড়েছে অস্বস্তি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর, এপ্রিল বা মে মাসে যে রকম হয়, ঠিক সে ভাবেই এ দিন অস্বস্তিসূচক উঠেছে ৬৫-র উপরে। আবহবিদেরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত গরমের এই দাপট চলবে!
গরম আর অতিরিক্ত আর্দ্রতার জেরে শরীরে জলের অভাব তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের পরামর্শ, অসুস্থতা ঠেকাতে যথেষ্ট জল খেতে হবে। তবে খুব ঠান্ডা জল বা রঙিন শরবত এড়িয়ে চলারই পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই হাওয়া বদলে সক্রিয় হয়ে উঠছে আন্ত্রিক, ইনফ্লুয়েঞ্জা আর টাইফয়েডের জীবাণু। ফলে শুধু শরীরে জলের অভাবই নয়, সতর্ক থাকতে হবে এ সব পরজীবী থেকেও।
মে-র তৃতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে দানা বেঁধেছিল ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। আবহবিদেরা জানান, রোয়ানুর প্রভাবে বর্ষার আগমন পিছিয়ে গেলেও দক্ষিণবঙ্গে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকে গিয়েছিল। তার ফলে নিত্যদিনই ছোটখাটো ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছিল। আকাশে জমছিল মেঘ। অল্পসল্প বৃষ্টিও হচ্ছিল। বাড়তে পারছিল না তাপমাত্রা।
কিন্তু সেই আবহাওয়া হঠাৎ বদলে গেল কেন?
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুপ্রবাহের ত্র্যহস্পর্শ যোগেই হাওয়া বদল ঘটেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আবহবিজ্ঞান দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানালেন, আরবসাগরে বর্ষা সক্রিয় হওয়ায় মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরের পথ দুর্বল হয়েছে। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গের উপরের স্তরে জমে থাকা জলীয় বাষ্পের প্রায় পুরোটাই উবে গিয়েছে। পাশাপাশি অসমে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। সেই ঘূর্ণাবর্ত মধ্য ভারতের গরম হাওয়া উত্তর-পূর্বের দিকে টেনে আনছে। গরম হাওয়ার পুরোটাই বয়ে যাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের ওপর দিয়ে। তাতেই চড়ছে পারদ।
গোকুলবাবু জানান, মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরের পথ শক্তিশালী হলে আবহাওয়া পাল্টাবে। না হলে অপেক্ষা করতে হবে অসমের ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হয়ে পড়া পর্যন্ত। এক আবহবিদের মন্তব্য, ‘‘ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে অন্ধ্র, ওড়িশা হয়ে দক্ষিণবঙ্গের দোরগোড়ায় বর্ষা পৌঁছলে আর কথাই নেই!’’