ভরদুপুরে বেশ গরম। কিন্তু ঘাম নেই! তার বদলে শুকনো হাওয়া বইছে। রীতিমতো টান-টান ভাব দেহত্বকেও। পুরোদস্তুর শীত আসতে এখনও অন্তত দু’সপ্তাহ বাকি। শীতের ঠান্ডা না-এলেও শুষ্কতা এসে গিয়েছে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গে।
কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, নভেম্বরে এমন শুকনো আবহাওয়া বিশেষ দেখা যায়নি। বরং নভেম্বরেও আর্দ্রতার পাশাপাশি বৃষ্টি হয়েছে। কখনও কখনও ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপের দাপটও দেখা গিয়েছে। তা হলে এ বছর এমন পরিস্থিতি কেন? এ বার আর্দ্রতা এখনই কেন এমন নিম্নমুখী?
আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তামিলনাড়ু উপকূলে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝ়়ড় ‘গজ’-এর প্রভাবেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাঁদের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নেওয়ার পরে বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয় থাকে। কিন্তু তামিলনাড়ু উপকূলে গজের হানা এবং ফের একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার ফলে সেই উচ্চচাপ সরে গিয়েছে। তার জায়গায় উত্তর দিক থেকে শুকনো হাওয়া ঢুকছে। তার ফলেই কমছে আর্দ্রতা।
আবহবিদদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত কয়েক বছরে বিদায়বেলায় বিলম্বিত ছন্দ ছিল বর্ষার। দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা সাধারণ ভাবে বিদায় নেয় ৮ অক্টোবর। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বর্ষার বিদায় নিতে নিতে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ গ়ড়িয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। খাতায়-কলমে বর্ষা বিদায় নিলেও বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত নিম্নচাপ, ঘূর্ণাবর্তের হাত ধরে জলীয় বাষ্প ঢুকত গাঙ্গেয় বঙ্গে। তার ফলে আর্দ্রতা বা়ড়ত। কিন্তু এ বছর বঙ্গোপসাগরের ওড়িশা-বাংলা উপকূলে তেমন কোনও জোরালো নিম্নচাপ তৈরি হয়নি। উল্টে কাশ্মীর এবং হিমাচলে একের পর এক পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া)-র প্রভাবে তুষারপাত হওয়ায় ঠান্ডা শুকনো হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই গাঙ্গেয় বঙ্গে রাতের তাপমাত্রা বেশ কিছুটা কমেছে। সোমবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীনিকেতন, রাঁচীতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি বা তার নীচে রয়েছে। বাঁকুড়া, বর্ধমান, আসানসোলেও রাতের তাপমাত্রা বেশ নীচের দিকে। উত্তরবঙ্গের সান্দাকফুতে তুষারপাত হয়েছে। দার্জিলিঙে হাড়কাঁপানো শীত। জলপাইগু়ড়ি এবং কোচবিহারে রাতের তাপমাত্রা যথাক্রমে ১৩.৭ ডিগ্রি এবং ১৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। আবহবিদদের পূর্বাভাস, রাতের তাপমাত্রা এখনই খুব বেশি নামার সম্ভাবনা নেই। তবে শুকনো আবহাওয়া মিলবে। ‘‘এক বারে তো ঝুপ করে শীত প়়ড়ে না। তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্য দিয়েই থিতু হয় সে,’’ মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।