মেয়ে হওয়ায় বঁটির কোপ, অ্যাসিড

বছর আটেক আগে কাটোয়ার কোয়ারাডাঙা-খাসপাড়ার খেতমজুর পরিবারের মেয়ে নুরতাজের সঙ্গে গ্রামেরই হিরাসিন শেখের বিয়ে হয়। দম্পতির সাড়ে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০৫:২২
Share:

নির্যাতিতা: কাটোয়ায় অত্যাচারের শিকার সেই মহিলা। নিজস্ব চিত্র।

মেয়ের জন্মের পর থেকেই শুরু হয়েছিল অত্যাচার। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেও স্বামীর ঘরে ফিরতে ইচ্ছুক ছিলেন বধূটি। তখনকার মতো মিটমাট হয়। কিন্তু ফের বধূটিকে বঁটির কোপ মেরে, অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ। স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির ছ’জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কাটোয়া থানায় অভিযোগ করেছেন নুরতাজ বিবি।

Advertisement

বছর আটেক আগে কাটোয়ার কোয়ারাডাঙা-খাসপাড়ার খেতমজুর পরিবারের মেয়ে নুরতাজের সঙ্গে গ্রামেরই হিরাসিন শেখের বিয়ে হয়। দম্পতির সাড়ে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বধূর দাবি, ‘‘মেয়ের জন্মের পরেই বাপের বাড়ি থেকে ৬০ হাজার টাকা আনতে চাপ দেওয়া হয় আমাকে। প্রায়ই মারধর করা হতো। বছর চারেক আগে তাড়িয়েও দেওয়া হয়েছিল।’’

নুরতাজের দিদি ময়না খাতুন জানান, তাঁরা সে সময়ে বোনকে পুলিশে অভিযোগ করতে বলেন। কিন্তু পুলিশ কিছু করার আগেই অভিযোগ তুলে নেন নির্যাতিতা। কেন? ময়না খাতুন বলেন, ‘‘বাবার সংসার টেনেটুনে চলে। বোন স্বামীর ঘরেই
থাকতে চেয়েছিল।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:আমার কষ্টটা কেউ বুঝছে না, আক্ষেপ পাণিপ্রার্থী বৃদ্ধের

স্বামীর কাছে মেয়ে এবং নিজের খরচ চেয়ে একটি মামলা অবশ্য করেছিলেন নুরতাজ। সে মামলায় মা-মেয়ের জন্য মাসিক ২,২০০ টাকা হিরাসিনকে দিতে বলেছিল কাটোয়া আদালত। এ দিন বধূটি দাবি করেন, তাঁকে এবং মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে সে বাবদ একটি টাকাও দেননি হিরাসিন। উল্টে মেয়ে-বউকে ঘরে না তুলে বাড়ির পাশের চালাঘরে থাকতে দেন। খাবার জন্য মাসে মাসে চাল দিতেন। গত ২৫ জুলাই তা থেকেই বাধে গোলমাল। বধূর কথায়, ‘‘খুব অল্প, নোংরা চাল দিয়েছিল। একটু ভাল চাল দিতে বলতেই স্বামী তেড়ে এল।’’ অভিযোগ, প্রথমে তাঁর দু’পায়ে, তার পর পিঠে বঁটির বাঁট দিয়ে মারধর করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পরে বধূটির বাঁ হাতে বঁটির কোপ মেরে কার্বলিক অ্যাসিড ছুড়ে মারেন স্বামী। চিৎকার শুনে পড়শিরা নুরতাজকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা ঘটনাটি শুনে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘মহিলাদের জন্য একাধিক আইন রয়েছে। উনি আগে আইনের দ্বারস্থ হলে এত দিন ভুগতেন না।’’ তবে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের সংযোজন, ‘‘দেরি করলেও মেয়েটি যে আইনের কাছে আসার সাহস পেয়েছেন, এটা ইতিবাচক।’’

পুলিশ আপাতত অভিযুক্তদের খুঁজছে। হিরাসিনকে মোবাইলে যোগাযোগ করা গিয়েছে। সব অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘মিথ্যা বলছে আমার স্ত্রী। ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখতে গিয়ে ওর হাতে দাগ হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন