স্ত্রীয়ের নামে মোটা টাকার জীবনবিমা করে, তারপর তাকে খুন করে টাকা পাওয়ার চেষ্টা— রহস্য উপন্যাস আর পুলিশের কেস ফাইল, দুটোতেই খুব পরিচিত ঘটনা। কিন্তু মালদহের হরশচন্দ্রপুরের তুলসিহাটার এক মহিলার খুনের ঘটনার তদন্ত যে এই দিকে মোড় নেবে, তা ভাবতে পারেনি পুলিশ।
ভাইফোঁটার দিন নিজের বাড়িতে মিলেছিল গৃহবধূ লক্ষ্মী সাহার (৪৫) গুলিবিদ্ধ দেহ। শোওয়ার ঘরে পড়ে থাকা দেহের বুক ও পেটে তিন-তিনটে গুলি মেলে। ঘরের আলমারির দরজা ছিল খোলা। এই অবস্থায় তাঁকে দেখতে পেয়ে পুত্রবধূ ফোন করেন তাঁর ছেলেকে। ছেলের ফোন পেয়ে লক্ষ্মীদেবীর স্বামী ভূপেন সাহা বাড়ির কাছে তাঁর দোকান থেকে ছুটে আসেন। স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।
তদন্তে নেমে প্রথম থেকেই পুলিশের খটকা লাগে বেশ কিছু ঘটনায়। বাড়ির গেট, আলমারির দরজা, খোলা থাকা সত্ত্বেও কোনওটাই ভাঙা নয়। পাশের ঘরে থেকেও পুত্রবধূ ধস্তাধস্তির আওয়াজ পাননি। তাঁর বয়ান অনুসারে, দুষ্কৃতীদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা থাকায় শাশুড়ি তাঁদের চিনতে পারেননি। সব মিলিয়ে পরিচিত লোকের কাজ বলেই মনে হতে থাকে পুলিশের।
পরিবারটির পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, একাধিক মহিলার সঙ্গে ভূপেনের সম্পর্ক আছে, এমন সন্দেহ করতেন লক্ষ্মীদেবী। অশান্তি লেগেই থাকত। খোঁজখবর করে পুলিশ আরও জানতে পারে, স্ত্রীর নামে সাড়ে বাইশ লক্ষ টাকার জীবনবিমা করিয়েছিলেন বিদেশি মদের ব্যবসায়ী ভূপেনবাবু। স্ত্রীর নামে নানা ব্যাঙ্ক থেকে ৮০ লক্ষ টাকা ধারও নিয়েছিলেন।
পুলিশকে ভূপেনবাবু জানিয়েছিলেন, তিনি ঘটনার দিন কীর্তন শুনতে গিয়েছিলেন। তারপর দোকানে ফিরে গিয়ে হিসেব মেলাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার পুলিশ ভূপেনবাবুকে নিয়ে তাঁর সে দিনের গতিবিধির পুনর্নির্মাণ করে। দেখা যায়, তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি রয়ে গিয়েছে। এর পর তাঁকে জেরা শুরু হয়। রাতের দিকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। জেরায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের সন্দেহ, বিমার টাকা হাতে পেতে, এবং ঋণ মকুব হওয়ার আশায় ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে স্ত্রীকে খুন করিয়ে থাকতে পারেন ভূপেনবাবু।