Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: ‘আমি নই, আমরা’, ঐক্যের মন্ত্রে দিল্লি মুঠোয় আনার ডাক

তৃণমূলের লক্ষ্য যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২২ ০৬:২১
Share:

ফাইল ছবি

আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। তবে তা ছাপিয়ে তৃণমূলের লক্ষ্য যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরে তৃণমূলের সভামঞ্চ থেকে দলের ঐক্য বজায় রেখে দিল্লিকে বাংলার মুঠোয় নিয়ে আসার আহ্বান জানালেন দলনেত্রী।

Advertisement

মমতার বার্তা, ‘‘আমি নই, আমরা। এই স্লোগানটাই চলবে তৃণমূলে। চলো, দিল্লি চলো—বলেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আমরা একত্রিত হয়ে কাজ করলে, আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে, দিল্লিও পার পাবে না। দিল্লি বাংলার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।’’ বারবারই মমতার মুখে শোনা গিয়েছে নতুন এই স্লোগান— ‘আমি নই, আমরা।’ সঙ্গে জুড়েছেন, ‘‘তৃণমূলটা আমরা সৃষ্টি। আমার সৃষ্টি কখনও বৃথা যাবে না। আমরা সারা দেশকে পথ দেখাই, পথ দেখাবও। আমরা আগামী দিনে ভারতবর্ষ জয় করব। এটা আমার জীবনের স্বপ্ন।’’

বুধবার মেদিনীপুরে কলেজ-কলেজিয়েট স্কুল মাঠে তৃণমূলের কর্মিসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন মমতা। ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী-সহ অন্য নেতৃত্ব। গোড়াতেই তৃণমূল নেত্রীর বার্তা, ‘‘আমি ঠিক করেছি, যে যে জেলায় প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক করতে যাব, সেখানে আমার বুথকর্মীদের সঙ্গেও মিলিত হব। কারণ তাঁরাই দলের সম্পদ। মঞ্চে বসে হাতেগোনা কয়েকজন। আর নীচে থাকে লক্ষ-লক্ষ, কোটি। নীচে যাঁরা থাকে তাঁরা বড় কর্মী এটা মানতে হবে। এবং এটা মেনে চলতে পারলেই তৃণমূল একদিন সারা বিশ্ব জয় করবে। ভারতবর্ষও জয় করবে।’’

Advertisement

রাজ্যের নানা প্রান্তে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জীবনযাত্রা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। পঞ্চায়েতস্তরে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে হামেশাই। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন স্পষ্ট করেছেন, দলের কর্মীদের সাধারণ জীবনযাপন করতে হবে, সরকারি সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার নামে কিছু নেওয়া যাবে না। একটা সাইকেল নিয়ে এলাকায় ঘোরার পরামর্শ দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি সেই কর্মী পছন্দ করি, যে রাস্তায় হেঁটে গেলে মানুষ বলে দেখো, ও আমাকে ডেকে আমার দরখাস্তটা পূরণ করে দিয়েছে। তাই আমি বিধবা ভাতাটা পেলাম। স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডারটা পেলাম।’’ এর অন্যথা হলে তিনি যে কড়া হতে দ্বিধা করবেন না, তা-ও স্পষ্ট করেছেন নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘আমি খুব রাফ অ্যান্ড টাফ লোক। কেউ কেউকেটা হয়ে যায়নি। সবাইকে নিয়ে চললে তবেই সেটা সবার দল হয়। একটা বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য মানে এই নয়, আমি আমার মতো সব করে নিলাম। তাহলে ঘ্যাচাং ফু হবে। কেটে দেব আমি। এক সেকেন্ডে কেটে দেব।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যাঁরা মানুষের কাজ করবে, দরকার হলে তাঁদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করব। আর যাঁরা মানুষের কাজ না করে নিজের কাজ করবে, তাঁদের বলব, দয়া করে ঘরে বসে যান।’’ দলীয় কোন্দল মেটানোরও নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানে যেখানে দূরত্ব আছে, দূরত্ব কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে।’’

মেদিনীপুরে দলীয় সভা থেকে মমতা সুর চড়িয়েছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও। তিনি বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর সরকার বাংলার প্রাপ্য টাকা দেয়নি। রান্নার গ্যাসের দাম, পেট্রোলের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। আটশো ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। এই সরকার মানুষ মারার সরকার। মানুষের পকেট লুট করে কাটমানি খাচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই হিন্দু-মুসলমান দেখিয়ে দেবে।’’ কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামারও বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘একশো দিনের কাজের টাকা পাঁচ মাস ধরে কেন্দ্র দিচ্ছে না। ব্লকে ব্লকে বিজেপি নেতারা গেলে বলবেন, আগে একশো দিনের টাকা দাও, তারপর এলাকায় ঢোকো। কারও গায়ে হাত দেওয়ার কথা আমি বলছি না। তবে রাজনৈতিকভাবে ব্লকে ব্লকে ধর্না তৈরি করুন।’’

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপি নেতাদের ব্লকে ঢুকতে না দেওয়ার এমন হুঁশিয়ারি চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক মানসিকতা।’’ আর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে শমীকের ব্যাখ্যা, ‘‘বিশ্ব-বাণিজ্যের সমীকরণ পরিবর্তনের জন্য সাময়িক দাম বাড়ছে। তবে এই পরিস্থিতি স্থায়ী হবে না। শীঘ্রই নিয়ন্ত্রিত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন