ভাবতে পারছি না, বেঁচে আছি

দিন দশেক হল শাশুড়ি হাসপাতালে ভর্তি। দুপুরের খাবার ওরা দেয় না। তাই রোজকার মতো এ দিনও বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলাম। চেঁচামেচির আওয়াজটা কানে এল হঠাৎই।

Advertisement

হাসিনা বিবি (সাগরদিঘির বাসিন্দা)

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

হাসিনা বিবি

দিন দশেক হল শাশুড়ি হাসপাতালে ভর্তি। দুপুরের খাবার ওরা দেয় না। তাই রোজকার মতো এ দিনও বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলাম। চেঁচামেচির আওয়াজটা কানে এল হঠাৎই। তবে বিশেষ পাত্তা দিইনি। হাসপাতালে তো এ সব হয়েই থাকে। তার উপর আবার ভিজিটিং আওয়ার। রোগীর বাড়ির লোকজন গিজগিজ করছে।

Advertisement

সবে টিফিন বাক্সটা খুলে বসেছি, প্রায় দৌড়তে দৌড়তে ঢুকলেন এক নার্স। আতঙ্কে মুখ লাল, চিৎকার করে বললেন— ‘আগুন আগুন! পালান এখান থেকে’।

কথাটা বুঝে উঠতেই সময় লেগে গিয়েছিল। কী বলছে, এই তো ঘরে ঢুকলাম। কই, কিছু তো চোখে পড়েনি! পড়ি কি মরি করে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, কয়েক হাত দূরের ঘরটা থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। গোটা বারান্দা ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। পাগলের মতো ছুটোছুটি করছে লোকজন। চারদিকে বাঁচাও, বাঁচাও আর্তনাদ।

Advertisement

কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পালাবো কী করে? শাশুড়িকে ফেলে তো পালাতে পারি না! কিন্তু উনি তো হাঁটাচলার অবস্থাতেই নেই। দিন দশেক আগে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙে গিয়েছে। সেই থেকেই হাসপাতালে ভর্তি। বড় অসহায় লাগছিল নিজেকে।

কিছু ক্ষণ আগেই দেওর আমাকে শাশুড়ির কাছে রেখে নীচে নেমেছিল। কোনও মতে ফোনটা হাতড়ে ওকে ফোন করি। বুকের ভিতর

ধুকপুকনি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু ওঁরও তো উপরে আসতে কিছু ক্ষণ সময় লাগবে। এক বার শাশুড়ির কাছে যাই, আর এক বার বারান্দায় এসে দাঁড়াই। এর মধ্যেই কয়েক জন দৌড়ে পালাতে গিয়ে এমন ভাবে ধাক্কা দিল, পড়েই যাচ্ছিলাম। কোনও মতে নিজেকে সামলাই। আর এক জন আমার হাত ধরে টেনে সিঁড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমি তখন চেঁচিয়েই যাচ্ছি, আমার শাশুড়ি রয়েছে। ওঁকে ফেলে পালাতে পারব না। ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই চোখে পড়ে দেওরকে।

দেওর শাশুড়িকে কাঁধে তুলে নেয়। কোনও মতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে হাসপাতালের বাইরে খোলা আকাশের নীচে এসে দাঁড়াই। তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি বেঁচে আছি। ভয়াবহ ওই কয়েক মিনিট যে কী ভাবে কেটেছে, বলে বোঝাতে পারব না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন