মদ খেয়ে অত্যাচারের অভিযোগ

জামাইকে খুন করেছি, থানায় কবুল শ্বশুরের

শুক্রবারের সন্ধ্যে। মেমারি থানার ডিউটি অফিসারের সামনে ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালেন বছর আটচল্লিশের এক ব্যক্তি। পরনে লুঙ্গি ও শার্ট। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, ‘‘আমি নিজের হাতে পাথর দিয়ে জামাইকে মাথায় মেরে খুন করেছি! মদ্যপ জামাইয়ের অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না। আমাকে গ্রেফতার করুন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেমারি শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

শুক্রবারের সন্ধ্যে। মেমারি থানার ডিউটি অফিসারের সামনে ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালেন বছর আটচল্লিশের এক ব্যক্তি। পরনে লুঙ্গি ও শার্ট। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, ‘‘আমি নিজের হাতে পাথর দিয়ে জামাইকে মাথায় মেরে খুন করেছি! মদ্যপ জামাইয়ের অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না। আমাকে গ্রেফতার করুন।’’

Advertisement

বক্তার নাম স্বপন মালিক। বাড়ি মেমারির বাগিলা গ্রামে। প্রাথমিক হতবুদ্ধি ভাব কাটিয়ে মেমারি থানার পুলিশ আধিকারিকেরা জেরা শুরু করেন। পরে গ্রেফতার করা হয় স্বপনকে। অথচ চিত্রনাট্যে যে এমন মোচড় আসবে, তা কিছুক্ষণ আগেও ভাবেনি পুলিশ। স্বপনের কথামতোই নিহত জামাইয়ের ছ’জন বন্ধুকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। কিন্তু, অনেক জেরার পরেও তেমন কোনও সূত্র মিলছিল না। তদন্ত কোন পথে এগোবে, পুলিশের এই ভাবনার মাঝেই স্বপনের নাটকীয় প্রবেশ মেমারি থানায়। এবং স্বীকারোক্তি! অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “ওই ব্যক্তি নিজে থানায় এসে জামাইকে খুনের কথা জানান। পুলিশ উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।”

স্বপনের জামাই অশোক ক্ষেত্রপালের (২৫) রক্তাক্ত দেহ বৃহস্পতিবার রাতে মিলেছিল বাগিলা গ্রামের রেলগেটের কাছে। তাঁর বাড়ি স্থানীয় কানাইপল্লিতে। কিন্তু, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে পাঁচ বছর ধরে অশোক থাকতেন শ্বশুরবাড়ি বাগিলায়। দেহের পাশে পড়েছিল রক্তমাখা পাথর। মেমারি থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “অশোক রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে ছিলেন। রোজ বিকেলে রেলগেটের কাছে বন্ধুদের নিয়ে মদের আসর বসাত। অশোকের খুনের পরে শ্বশুর এবং বাড়ির লোকজন ওই মদের

Advertisement

ঠেকে যাতায়াতকারী কয়েক জনের নাম জানান পুলিশের কাছে। আমরা স্থানীয় ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করি।’’

পুলিশের দাবি, ওই ছ’জনকে জেরা করেও অবশ্য কিছু পাওয়া যায়নি। এক সময় গ্রামে খবর ছড়ায়, এ বার বাড়ির লোকেদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে পাথরে লাগা ছাপের সঙ্গে মেলানোর জন্য। তাতেই ভয় পেয়ে যান স্বপন। স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্য প্রলয় পাল বলেন, “ওই ভয়েই ধরা দিয়েছেন উনি। গ্রামে জানিয়ে গিয়েছেন, ধরা না দিলে আটক যুবকেরা তো বটেই, পুলিশও তাঁর বাড়িতে হামলা চালাতে পারে।” স্থানীয় সূত্রের খবর, অশোকের শ্বশুরবাড়ির বাকি সদস্যেরাও গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। পুলিশের ধারণা, খুনের কথা তাঁদেরও জানা ছিল।

বুধবারই মদ্যপ স্বামীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে ধরা পড়েছেন ঝাড়গ্রামের শ্যামসুন্দরপুরের বধূ নমিতা দাস। স্বামীর নির্যাতন ও মারধর সহ্য করতে না পেরেই বিজয়া দশমীর রাতে তাঁকে পাল্টা পিটিয়ে মেরেছেন বলে পুলিশকে জেরায় জানিয়েছেন নমিতা।

নিজের জামাইয়ের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন স্বপন মালিক। পুলিশের দাবি, জেরায় তিনি জানান, রোজ রাতে মদ খেয়ে তাঁর মেয়ের উপরে নির্যাতন করতেন অশোক। বাধা দিলে তাঁদেরও মারধর করতেন। অশোকের অত্যাচারে বাড়ির সবাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। বুধবারও মদের ঠেক থেকে তাঁকে উদ্দেশ করে গালাগালি দেন অশোক। পরে মারধরও করেন। এর পরেই স্বপন ঠিক করেন, অনেক হয়েছে। এ বার একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, রাতে অশোককে একা রাস্তার ধারে শুয়ে থাকতে দেখে পাথর তুলে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বিসর্জনের সময় ঘটনাটি ঘটায় কাকপক্ষীতেও টের পায়নি। সেই সুযোগ নিয়ে পুলিশি তদন্তকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নিহতের শ্বশুর। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন