ইগনু যখন স্বপ্ন-উড়ান

চলতি শিক্ষাবর্ষে ইগনু-র রঘুনাথগঞ্জ রিজিওনাল-এর বেশ কয়েকটি স্টাডি সেন্টারে ইতিমধ্যে ১০ জন রূপান্তরকামী ভর্তিও হয়েছেন। সংখ্যাটা তেমন বড় না হলেও সাড়া যে মিলছে, তাতেই উচ্ছ্বসিত ইগনু কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০৬
Share:

অরুণাভ নাথ

পথটা আগেই খুলে গিয়েছে। এ বার সেই পথ ধরেই স্বপ্নপূরণ করতে চান ওঁরা। ওঁরা মানে রাজকুমার দাস, অরুণাভ নাথ, মৃগেন্দ্র দে, কৌশিক দত্তের মতো আরও অনেকে রূপান্তরকামী। তাঁদের কথা ভেবে সম্প্রতি পড়ার ফি মকুব করে দিয়েছে ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু)। সেই সিদ্ধান্তে রূপান্তরকামীরা খুশি তো বটেই, তাঁরা বিষয়টিকে স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন।

Advertisement

চলতি শিক্ষাবর্ষে ইগনু-র রঘুনাথগঞ্জ রিজিওনাল-এর বেশ কয়েকটি স্টাডি সেন্টারে ইতিমধ্যে ১০ জন রূপান্তরকামী ভর্তিও হয়েছেন। সংখ্যাটা তেমন বড় না হলেও সাড়া যে মিলছে, তাতেই উচ্ছ্বসিত ইগনু কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এর আগে ভর্তির ফর্মে রূপান্তকামীদের জন্য কোনও আলাদা জায়গা থাকত না। পুরুষ ও মহিলার পাশে লেখা থাকত ‘অন্যান্য’। সেই ‘অন্যান্য’ বিভাগেও গত বছর পর্যন্ত রঘুনাথগঞ্জ রিজিওনালে কেউ নাম লেখাননি।

ইগনু-র রঘুনাথগঞ্জ রিজিওনাল সেন্টার ডিরেক্টর শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এক দিকে রূপান্তরকামীদের ‘ফি’ মকুব, অন্য দিকে, তাঁদের পড়াশোনা চালিয়ে য়াওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা—এই দু’টি পদক্ষেপ কাজে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। আশা করছি, সংখ্যাটা আরও বাড়বে।”

Advertisement

তবে, রাজকুমার, অরুণাভ কিংবা কৌশিকেরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল ষোলো আনাই। কিন্তু নানা বাধার কারণে সেটা হয়ে উঠছিল না। ইগনু-র সৌজন্যে আমরা এ বার স্বপ্নপূরণ করতে পারব।’’

বহরমপুরের বাসিন্দা অরুণাভ বিএ পাশ করে পড়াশোনায় ইতি টেনেছিলেন। তিনি বলছেন, ‘‘পড়তে গেলে তো বাইরে বেরোতে হয়। সেখানে পদে পদে সমস্যা রয়েছে। তবে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল অর্থনৈতিক। ইগনু আমাদের জন্য ফি মকুব করে দেওয়ায় সেই বাধাটা দূর হল।’’ সম্প্রতি তিনি এমএ (সমাজবিদ্যা) ভর্তি হয়েছেন।

রাজকুমার জানাচ্ছেন, তাঁর বিষয়টি আবার নিজের পরিবারও তেমন ভাবে মেনে নিতে পারেনি। ফলে পড়াশোনার খরচটা তাঁকেই জোগাড় করতে হত। তাঁর কথায়, ‘‘সেই কারণে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ার পরে আর পড়াশোনাটা চালাতে পারিনি। ইগনু-র বিষয়টি জানার পরেই ফের সেখানে ভর্তি হয়েছি।’’

কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ তথা রাজ্যের রূপান্তরকামী উন্নয়ন বোর্ডের সহ-সভাপতি মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত শুভ প্রয়াস। আমার খুব ভাল লাগছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা জরুরি।’’ রূপান্তরকামীর পাশাপাশি বন্দিদেরও নিখরচায় পড়াচ্ছে ইগনু। বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ৭০ বন্দি এ বার ইগনুতে ভর্তি হয়েছেন। শান্তনুবাবু বলছেন, “ওই সংশোধনাগারে শীঘ্রই একটি স্টাডি সেন্টার চালু করা হবে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা গিয়ে পড়িয়ে আসবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন