সমাধানের পথে কিছুটা এগোল খড়্গপুর আইআইটি। প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর নিজেদের অনড় অবস্থান থেকে খানিকটা সরে এল দু’পক্ষই।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ন’জন ছাত্র প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডিন অব স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স মণীশ ভট্টাচার্য-সহ তিন জন ডিন। রাত ১০টার পর জানানো হয় আজ, বৃহস্পতিবার আইআইটি-র ডিরেক্টরের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আধিকারিকরা। এর পরেই অবস্থান তুলে নেন পড়ুয়ারা। তবে আপাতত। পড়ুয়ারা বলছেন, আন্দোলন থামেনি। বৈঠকের ফল দেখে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। বৃহস্পতিবারও প্রশাসনিক ভবনের সামনে যথারীতি জমায়েত করবেন ছাত্রছাত্রীরা।
খড়্গপুর আইআইটির গবেষক ছাত্র অরিন্দম রায় বলেন, ‘‘আমরা বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবি থেকে সরে আসছি না। ২৬ ডিসেম্বর ফি দেওয়ার যে দিন স্থির হয়েছে তাও আপাতত স্থগিত করার দাবি রাখছি।’’
প্রতি সেমেস্টারে ছাত্রপিছু হল (হস্টেল) ফি ৭,৫৫০ টাকা বাড়ানো হবে বলে গত ৭ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। সেই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার থেকেই আন্দোলন শুরু করেছিলেন এমটেক ও গবেষক পড়ুয়ারা। রাতভর ওই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী, রেজিস্ট্রার প্রদীপ পাইন-সহ কয়েকজন অধ্যাপককে ঘেরাও করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। এ দিন সকালে ‘বোর্ড অব গভর্নর’-এর বৈঠক ডাকেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বৈঠকের পর কিছু না-জানিয়েই পার্থপ্রতিমবাবু বেরিয়ে যান বলে পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ। গোটা বিষয়টি নিয়ে আইআইটি-র রেজিস্ট্রার প্রদীপবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
আইআইটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রদের ডেকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করানোর মতো হুমকি দেওয়ার অভিযোগও তুলছেন পড়ুয়ারা। সেই সূত্রেই পড়ুয়াদের দাবি, আন্দোলেন যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের কেরিয়ারে যেন ক্ষতি না-হয়, তা কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
এমনিতে সব পড়ুয়ার থেকেই ‘হল (হস্টেল) ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ ফি নেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, পেনশন, হস্টেলের থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতি ছ’মাস অন্তর এই ফি নেওয়া হয়। একবারে ৭,৫৫০ টাকা ফি বাড়ায় গবেষক ও এমটেক পড়ুয়াদের প্রতি সেমেস্টারের খরচ প্রায় ২৯ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হবে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা। এক ধাক্কায় এই ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তেই চটেছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, মূলত হলের স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, পেনশনের বোঝা ছাত্রদের ঘাড়ে চাপাতেই এই ফি বৃদ্ধি। তাছাড়া এখনও ‘পণ্য ও পরিষেবা কর’ (জিএসটি) চালু না-হলেও পড়ুয়াদের থেকে আইআইটি কর্তৃপক্ষ তা আদায় করতে চাইছেন।
ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষক ছাত্রী অন্বেষা সেনগুপ্ত বলেন, “প্রতি বছরই সামান্য হারে ফি বাড়ে। এ বার এতটা বেশি হারে ফি বৃদ্ধি মানতে পারছি না।’’ ওই বিভাগের আর এক গবেষক ছাত্র প্রতিম কুণ্ডুর বাড়ি খড়্গপুরে হওয়ায় তিনি হস্টেলে থাকেন না। তাঁর প্রশ্ন, “আমাকেও হস্টেলের টাকা দিতে হয়। এখন সেই টাকা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় কী ভাবে দেওয়া সম্ভব?’’