পাউচের ভরসায় রমরমা কারবার

ভাটি ভাঙা পড়ে মাঝেমধ্যেই। কখনও প্রশাসনের উদ্যোগে, কখনও প্রমীলা বাহিনীর দাপটে। কিন্তু চোলাইয়ের জোগানে ভাটা পড়ে না! 

Advertisement

উলুবেড়িয়া

নুরুল আবসার, সুব্রত জানা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:১৩
Share:

প্রকাশ্যে: বাণীতবলায় পাওয়ার হাউসের সামনে প়ড়ে চোলাইয়ের পাউচ। নিজস্ব চিত্র

ভাটি ভাঙা পড়ে মাঝেমধ্যেই। কখনও প্রশাসনের উদ্যোগে, কখনও প্রমীলা বাহিনীর দাপটে। কিন্তু চোলাইয়ের জোগানে ভাটা পড়ে না!

Advertisement

এক সময়ে উলুবেড়িয়ার কামিনা, তুলসিবেড়িয়া, সোমরুক, সাঁকরাইলের মাসিলা, শ্যামপুরের শিবগঞ্জের মতো বেশ কিছু এলাকায় রমরমিয়ে চলত চোলাইয়ের ভাটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে সিংহভাগই এখন বন্ধ। কিন্তু রয়ে গিয়েছে দু’একটি জায়গায় ভাটি। সেখান থেকেই প্লাস্টিকের পাউচে চোলাই ছড়িয়ে পড়ছে অন্য এলাকায়।

বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সম্প্রতি পুলিশ ও আবগারি দফতর বেআইনি ভাবে দেশি-বিদেশি মদ বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। কড়াকড়ি করা হচ্ছে। কারণ, সরকার নির্দিষ্ট দোকানের মাধ্যমে মদ বিক্রি করতে চাইছে। তাই চোলাই কারবারের দিকে নজর নেই। ফলে, ওই ব্যবসা রমরমিয়েই চলছে। তা বন্ধে প্রশাসনিক তৎপরতা নেই।

Advertisement

অভিযোগ অস্বীকার করে হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মার দাবি, ‘‘চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চলে নিয়মিত। গাফিলতির প্রশ্নই নেই। নদিয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে।’’ যদিও এক আবগারি কর্তা স্বীকার করেছেন, ‘‘রুটিন অভিযানের ফাঁক গলেই চলছে চোলাইয়ের রমরমা।’’

বছর দশেক আগেও কামিনা ও তুলসিবেড়িয়ায় ঘরে ঘরে ছিল ভাটি। বহু মানুষের প্রাণ নিয়েছে চোলাই। পরে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এলাকার মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। শ্যামপুরের শিবগঞ্জ, উলুবেড়িয়ার সোমরুক, সাঁকরাইলের মাসিলার ভাটিও মহিলারাই ভেঙেছেন। কিন্তু চোলাই-রমরমা কমেনি উলুবেড়িয়ার মদাই আর শাঁখাভাঙায়। এখান থেকেই জারিকেনে ভরে চোলাই যায় হাওড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। তা পাউচে বিক্রি হয় বলে কারবারিরাই জানান।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের কুলগাছিয়া স্টেশনে ডাউন প্ল্যাটফর্মের ধারে দিনরাত চোলাইয়ের আসর বসে বলে অভিযোগ। উলুবেড়িয়া রবীন্দ্রভবনের সামনে, যদুরবেড়িয়া জেলেপাড়ায় মুম্বই রোড, বাগনানের নবাসন-পাতিনান রাস্তার ধারে, ঘোড়াঘাটা স্টেশনের কাছে, উলুবেড়িয়ার বাণীতবলা পাওয়ার হাউসের সামনে, বাগনানে মুম্বই রোডের অসম্পূর্ণ সার্ভিস রোডের উপরে, উলুবেড়িয়া বাণীবন বাজার, খলিসানি মোড়ের চোলাই ঠেক নিয়েও অনেক সাধারণ মানুষ বিরক্ত।

দুই কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে অনেকটা হেঁটে কলেজে যেতে হয়। রাস্তার ধারে এমন ভাবে চোল‌াই খাওয়া হয় যে আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করি।’’ কামিনার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার মন্টু শী বলেন, ‘‘পাউচ বন্ধ করা না-গেলে ভাটি ভেঙে লাভ নেই।’’

কিন্তু কেন মদাই এবং শাঁখাভাঙায় চোলাই কারবার বন্ধ হয় না? পুলিশ ও আবগারি কর্তাদের দাবি, একাধিকবার অভিযানে গিয়ে বিপদে পড়তে হয়েছে। ধরতে গেলে ব্যবসায়ীরা অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ করে। নৌকায় করে পালিয়ে যায়। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতেই ভাটি চলে এখানে। আবগারি কর্তাদের একাংশও পুলিশের সঙ্গে কারবারিদের যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন। জেলা পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘আবগারি দফতরের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালায় পুলিশ। সব রকম ভাবে সাহায্য করা হয়।’’

তবু চোলাই কারবার অব্যাহত দুই তল্লাটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন