আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদি। ছবি: পাপন চৌধুরী
মাধ্যমিকে পাশ করেছে ছেলে—স্কুল থেকে ফোন এসেছিল বেলা ১১টা নাগাদ। আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদি বলে ওঠেন, ‘‘এই ফল জানতে পারলে ছেলেটা খুশিই হত। ও তো ডাক্তার হতে চাইত!’’ সন্তানহারা এই বাবার ঘোষণা, অভাব-অনটনের কারণে কোনও পড়ুয়ার পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে খবর পেলে তিনি সাধ্য মতো সাহায্য করবেন।
অণ্ডালের ইকবাল অ্যাকাডেমি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ত ইমাম রশিদির বছর ষোলোর ছোট ছেলে মহম্মদ সিবগাহতুল্লা। এ বছর সেখান থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। মাস দু’য়েক আগে গোষ্ঠীসংঘর্ষে তেতে ওঠে আসানসোলের রেলপাড় এলাকা। তখনই এক দিন নিখোঁজ হয়ে যায় সিবগাহতুল্লা। পরে উদ্ধার হয় তার দেহ।
ওই ঘটনার পরে ইমাম কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাননি। বরং ছেলের শেষকৃত্যে হাজির জনতাকে বার্তা দেন, এই মৃত্যুর প্রত্যাঘাতে কোনও গোলমাল পাকানো হলে তিনি আসানসোল ছেড়ে চলে যাবেন। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে এমন বার্তা এলাকায় তাঁকে ‘শান্তির মুখ’ করে তুলেছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্য সরকার ‘বঙ্গ সম্মান’-এর জন্যও তাঁর নাম বিবেচনা করেছিল। কিন্তু, রমজান মাস চলায় মসজিদ ছেড়ে যেতে অপারগ জানিয়ে সে অনুষ্ঠানে যাননি ইমাম।
রাজ্য শিশু সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে আগামী ৯ জুন কলকাতার রবীন্দ্র সদনে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে ইমাম রশিদিকে সম্মান জাননোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ। ইমাম অবশ্য জানান, তাঁর পরিবর্তে বড় ছেলে ও কয়েক জন প্রতিনিধি রবীন্দ্র সদনে গিয়ে এই সম্মান গ্রহণ করবেন।
এ দিন সকাল থেকে নুরানি মসজিদ এলাকার অনেক বাসিন্দাই সিবগাহতুল্লার পরীক্ষার ফল জানার অপেক্ষায় ছিলেন। ৪১২ নম্বর পেয়েছে সে। স্কুল সূত্রে জানা যায়, উর্দুতে ৭১, ইংরেজিতে ৬১, অঙ্কে ৪০, ভৌত বিজ্ঞানে ৪৫, জীবন বিজ্ঞানে ৫৭, ইতিহাসে ৭৩ ও ভূগোলে ৬৫ পেয়েছে সিবগাহতুল্লা। ইমাম বলেন, ‘‘ছেলে নেই। ও পাশ করেছে শুনে ভাল লাগছে।’’ ছেলের আত্মার শান্তি কামনার সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘যারা এ বার মাধ্যমিক পাশ করল, সবাই আমার সন্তানের মতো। প্রত্যেকের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: পাশ করেছে, জানলই না বিয়েরোখা পারুল
ফল বেরোনোর দিন মন খারাপ সিবগাহতুল্লার শিক্ষক ও সহপাঠীদেরও। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শাহিদ হুসেইন খান বলেন, ‘‘খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল ও। পড়াশোনা করত মন দিয়ে। স্কুলের সব রকম অনুষ্ঠানেও সক্রিয় থাকত। এমন দিনে সিবগাহতুল্লা নেই, ভাবতে পারছি না!’’ স্কুলের তরফে ইমামের এক প্রতিনিধির হাতে ছেলের ‘মার্কশিট’ তুলে দেওয়া হয়। ছেলের ফল জানার পরে সারা দিন আর মসজিদ থেকে বেরোননি ইমাম।