প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় কারও জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত পরীক্ষা করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। কয়েকটি পুরসভা, সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র জ্বর হওয়ার তিন-চার দিন কেটে গেলে রক্ত পরীক্ষার কথা বলছে, তাতে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁদের মত।
কলকাতার এক সরকারি চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা, তিনি সরকারি নির্দেশিকা ছাড়াই স্রেফ উপসর্গ দেখে তাঁর এক পরিচিতকে ভর্তি করিয়ে নজরদারি চালিয়ে তাঁকে রোগমুক্ত করেছেন। ওই চকিৎসকের মন্তব্য , ‘‘সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেই আলাদা ভাবে নজরদারি চালিয়েছি। কোনও ভাবেই যাতে মশা কামড়াতে না পারে তা সুনিশ্চিত করেছি। চার দিন পরে ওই রোগী রক্তবমি করতে শুরু করেন। পরে এলাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি সংক্রমণ নিশ্চিত হয়।’’ জ্বরের প্রথম দিনেই ওই রোগীর এনএসওয়ান পজিটিভ রিপোর্ট এসেছিল বলে ওই চিকিৎসকের দাবি। তিনি বলেন, আগে থেকেই চিকিৎসা শুরু করায় জটিলতা এড়ানো গিয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই আগাম চিকিৎসাটাই হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সেখানে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরে ডেঙ্গির চিকিৎসা শুরু করা হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গি এবং অজানা জ্বরের সংক্রমণ যেখানে দ্রুত ছড়াচ্ছে সেখানে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসার জন্য বসে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে জানাচ্ছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা। স্বাস্থ্য ভবনের অধিকাংশ কর্তা এখন মামলার প্রসঙ্গ তুলে ডেঙ্গি সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়াচ্ছেন। তবে সোমবার প্রশ্নের উত্তরে এক কর্তা জানান, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) চিকিৎসাবিধি মেনেই আমরা ডেঙ্গির চিকিৎসা করছি।’’
কিন্তু পরজীবী-গবেষক, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর বক্তব্য, ‘‘হু বলেছে কোনও এলাকায় যদি কোনও রোগ ব্যাপক ছড়ায় তা হলে উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা শুরু করা উচিত। রক্ত পরীক্ষার জন্য অপেক্ষার দরকার নেই।’’ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন একটি গবেষণা সংস্থার এক গবেষকেরও মন্তব্য, ‘‘এনএসওয়ান পজিটিভ হওয়া মানে রক্তে একটা কিছু সংক্রমণ যে হয়েছে তা নিয়ে তো সন্দেহ থাকতে পারে না।’’ এলাকাটি ডেঙ্গিপ্রবণ হলে সংক্রমণটি যে ডেঙ্গি ভাইরাসের, তা ধরেই ওই ব্যক্তির উপরে নজরদারি চালাতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন ওই বিজ্ঞানী। তাঁর মন্তব্য, যেখানে জ্বর ছড়াচ্ছে কিন্তু ডেঙ্গি ধরা পড়ছে না, সেখানে কেন রোগটা এমন সংক্রামক হল তা জানার চেষ্টা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘যদি জ্বরের প্রথম দিন এনএসওয়ান পরীক্ষা করিয়ে পজিটিভ ব্যক্তিদের আলাদা রেখে নজরদারি চালানো হতো, তা হলে মনে হয় সংক্রমণের এমন বাড়াবাড়ি হতো না।’’