রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ।
পশ্চিমবঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও হিংসামুক্ত পরিবেশে পঞ্চায়েত ভোট করাতে ব্যর্থতার অভিযোগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে অপসারণের প্রস্তাবে সই করলেন বিশিষ্ট জনেরা। শঙ্খ ঘোষ, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, অশোকনাথ বসু প্রমুখের সই করা প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে সব রাজনৈতিক দলের কাছে। আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনারকে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে ইমপিচ করতে হয়। সংসদে প্রতিনিধি আছে, তৃণমূল-সহ বাংলার এমন সব দল ও অন্য আঞ্চলিক দলের কাছেও যাচ্ছে প্রস্তাব। নির্বাচন কমিশনারের ইমপিচমেন্ট চেয়ে এমন উদ্যোগ নজিরবিহীন।
লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার তথা আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব তৈরি করেছেন প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যেরা। ওই প্রস্তাবের উপরে বিশিষ্টদের সমর্থন নিয়েছে ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’ মঞ্চ। তারাই তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি-সহ নানা দলের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। রাজ্যসভার ৫০ জন বা লোকসভার ১০০ জন সাংসদ সম্মত হলে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব সংসদে তোলা যাবে। অশোকবাবুর মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এ বার যে ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে, ভারতে কখনও তেমন হয়নি। কমিশনারের নজিরবিহীন ব্যর্থতার জন্য নজিরবিহীন ব্যবস্থা চাইছি আমরা।’’ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যা বলার সকলেই তো বলে দিচ্ছেন! আমি আর কী বলব!’’
পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা যা মন্তব্য করেছেন, তা থেকেই কমিশনারের নিরপেক্ষতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছে বলে প্রস্তাবকেরা মনে করেন। সরকারি হিসেবে শুধু যে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তা-ই নয়। মনোনয়ন-পর্বেই যে ভাবে প্রার্থীদের বাধা দেওয়া হয়েছে, তা বেনজির বলেই তাঁদের অভিযোগ। অশোকবাবুর মন্তব্য, ‘‘গণতন্ত্র রক্ষায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নানা জায়গায় গিয়ে জোট বাঁধার কথা বলছেন। কিন্তু তাঁর নিজের রাজ্যে গণতন্ত্রের হাল কে দেখবে!’’ প্রয়োজনে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারেন বলে অশোকবাবু ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’র সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে সব দল নানা অভিযোগ করেছে, তাদের এখন অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত।’’ রাজনীতিকদের মধ্যে প্রস্তাবে এখনও পর্যন্ত সই করেছেন শুধু বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।