Gangasagar Mela 2024

প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিশ্বাসের ডুব, সাক্ষী রইল সাগরসঙ্গম

শুধু ভারত নন, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এ দিন সাগরে ডুব দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের ৯২ বছরের সুমিত্রা নিরে। বয়সের ভারে হাঁটতে পারেন না। তাই হুইলচেয়ারে চাপিয়ে দিদিশাশুড়িকে জলের কিনারায় নিয়ে গিয়েছেন নাতজামাই মুকুন্দ গাড়েকর।

Advertisement

মিলন হালদার

গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪০
Share:

লোকারণ্য: গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের ভিড়। শনিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

জলে দাঁড়িয়ে আছেন এক যুবক। তাঁর পিঠে চেপে আছেন আরও এক জন। পিঠের যুবককে নিয়েই সাগরসঙ্গমে ডুব দিলেন তিনি। জল থেকে উঠে দু’জনের মুখে যেন পুণ্য অর্জনের হাসি!

Advertisement

এ হেন দৃশ্যের নেপথ্যে অবশ্য অন্য একটি গল্প আছে। পিঠে ওঠা যুবকের নাম ভারত সেহন লোধি। তাঁর দু’টি পা জন্ম থেকেই ছোট। পায়ের পাতাও বাঁকা। তাই হাঁটতে পারেন না। এই প্রতিবন্ধকতা যাতে পুণ্য অর্জনে বাধা না হয়, সে জন্যই ভারতকে পিঠে চাপিয়ে গঙ্গাসাগরে এসেছেন ছোটেলাল। বন্ধুকে পিঠে চাপিয়ে সাগরে ডুব দিয়েছেন, আবার পিঠে চাপিয়েই বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছেন কপিল মুনির আশ্রমে।

শুধু ভারত নন, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এ দিন সাগরে ডুব দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের ৯২ বছরের সুমিত্রা নিরে। বয়সের ভারে হাঁটতে পারেন না। তাই হুইলচেয়ারে চাপিয়ে দিদিশাশুড়িকে জলের কিনারায় নিয়ে গিয়েছেন নাতজামাই মুকুন্দ গাড়েকর। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্যে ধরাধরি করে সুমিত্রাকে জলে স্নান করিয়েছেন তাঁর নাতজামাই। তবে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা, ৬২ বছরের ফুলপাত্তি দেবীর অবস্থা এতটাও ভাল নয়। ৬২ বছর বয়সেই একাধিক অসুখে শয্যাশায়ী তিনি। মাকে তাই স্ট্রেচারে চাপিয়ে পুণ্যস্নানে নিয়ে এসেছেন ছেলে বীরবিক্রম সিংহ। স্ট্রেচার বইতে হাত লাগিয়েছেন ভারত সেবাশ্রমের স্বেচ্ছাসেবকেরাও। পুণ্যস্নানে হাসি ফুটেছে ফুলপাত্তির মুখে। সেই হাসির আলো ছড়িয়েছে ছেলের মুখেও।

Advertisement

এ হেন নানা ঘটনাতেই শনিবার কেটেছে মেলা প্রাঙ্গণ। এসেছেন রাজ্যের মন্ত্রী-সান্ত্রীরাও। সাংবাদিক বৈঠক করে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, এ দিন বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ লক্ষ তীর্থযাত্রী পুণ্যস্নান করেছেন। পাঁচ জন অসুস্থ পুণ্যার্থীকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চার জন এম আর বাঙুর হাসপাতালে এবং এক জন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ১৮টি পকেটমারির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন অপরাধে ১৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অরূপ ছাড়াও সুজিত বসু, ইন্দ্রনীল সেন, পার্থ ভৌমিক এ দিন মেলায় ছিলেন। মেলা চত্বরে প্লাস্টিক-বিরোধী পদযাত্রায় ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত। পুণ্যার্থীদের দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে সাগরে মোতায়েন আছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৭০ জনের একটি দল। তাতে আছেন ১১ জন মহিলা সদস্য। পাহারা দিচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনীও।

বিকেলে মেলার মাঠে ফের দেখা ভারতের সঙ্গে। বললেন, ‘‘লোকে বলে, সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর এক বার। তবে এ নিয়ে দু’বার এলাম সাগরে। ২০১০ সালেও ছোটেলাল পিঠে চাপিয়ে মেলা ঘুরিয়েছিল।’’ বলতে বলতেই নিজের পায়ে হাত বোলান ভারত। আপন মনে বলতে থাকেন, ‘‘এত কষ্ট করে পুণ্য অর্জন করছি। পরের জন্মে নিজের পায়ে হেঁটে তীর্থ করব।’’ বন্ধুর কথা শুনে সাগরের দিকে চেয়ে থাকেন নীরব ছোটেলাল।

মেলার কোলাহলেও অনির্বচনীয় নীরবতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন