সাগরস্নানে কাঁপন-বার্তা উত্তুরে হাওয়ায়

সারা মরসুম ঝিম মেরে থাকার পরে ফাইনালে তার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতই জোরদার হচ্ছে। ফাইনাল মানে পৌষ-সংক্রান্তি। সাগরস্নানে শীত এ বার দারুণ দাপট নিয়েই ব্যাট চালাবে বলে জানাচ্ছে উত্তুরে হাওয়া। হিমাচল প্রদেশের লাগাতার তুষারপাতে সেই সম্ভাবনার সমর্থনও মিলছে ষোলো আনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৯
Share:

সারা মরসুম ঝিম মেরে থাকার পরে ফাইনালে তার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতই জোরদার হচ্ছে। ফাইনাল মানে পৌষ-সংক্রান্তি। সাগরস্নানে শীত এ বার দারুণ দাপট নিয়েই ব্যাট চালাবে বলে জানাচ্ছে উত্তুরে হাওয়া। হিমাচল প্রদেশের লাগাতার তুষারপাতে সেই সম্ভাবনার সমর্থনও মিলছে ষোলো আনা।

Advertisement

পূর্বাভাস মিলেছিল হিমাচলে বরফ পড়া শুরু হওয়ার পরেই। মঙ্গলবার ভরদুপুরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া রীতিমতো কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে! দিনের তাপমাত্রা ছিল অনেক কম। উপরি পাওনা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে কমবেশি বৃষ্টিপাত।

এ দিন সকাল থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টির সুবাদে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে রাঁচী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়। রাঁচীর মৌসম ভবনের ডিরেক্টর বি কে মণ্ডল জানান, পশ্চিমি ঝঞ্ঝার জন্য নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। তাই বুধবার পর্যন্ত আকাশ মেঘলা থাকবে। কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টিপাত হবে। দু’দিন বাদে মেঘ কেটে রোদ উঠলে আরও বেশি জাঁকিয়ে পড়বে শীত। তখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আট ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা। পৌষ-শেষেও শীতের রাস্তা অবশ্য পুরোপুরি নিষ্কণ্টক নয়। আবার কাঁটা যতটুকু আছে, সেটা সরে যেতে অসুবিধে হবে না বলেও আশা দিচ্ছে হাওয়া অফিস। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, উত্তুরে হাওয়া বইছে ঠিকই। সেই সঙ্গে বাতাসে রয়েছে জোলো ভাব। তাতে দিনের তাপমাত্রা কমছেও। কিন্তু রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নামছে না। এ দিনও কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (১৬.৪) ছিল স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি উপরে। পশ্চিমের বিভিন্ন জেলাতেও রাতের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ১৫-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছেপিঠে। খটকা এটাই। এর কারণ হিসেবে হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, রাজ্যের উপর দিয়ে একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বয়ে যাচ্ছে। আর তার পিছনে পিছনে ঝাড়খণ্ডের উপরে হাজির হয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্তও।

Advertisement

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, “ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবেই দক্ষিণবঙ্গের কোনও কোনও জেলায় হাল্কা বৃষ্টি হয়েছে।” হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, কাল, বৃহস্পতিবার থেকেই রাতের তাপমাত্রা তরতরিয়ে নামতে শুরু করবে। ঝঞ্ঝা কেটে গেলেই পৌষ-সংক্রান্তিতে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়বে।

অর্থাৎ অচিরেই শীত-পথের কাঁটা সরবে বলে হাওয়া অফিসের আশ্বাস। তাদের ব্যাখ্যা, ঝঞ্ঝার, বিশেষত পশ্চিমি ঝঞ্ঝার দ্বিমুখী ভূমিকাই শীতের দাপট নিয়ন্ত্রণ করে। আবির্ভাব পর্বে পশ্চিমি ঝঞ্ঝাই শীতের পথে কাঁটা ছড়ায়। আবার শীতের সামনে খুলে দিয়েই বিদায় নেয় সেই সব ঝঞ্ঝা। আবহবিদেরা জানান, এ বার জোরালো ঝঞ্ঝার প্রভাবেই বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছিল শীত। উত্তর ভারতেও ঠান্ডার কনকনে ভাবটা মালুম হচ্ছিল না কিছুতেই। বছরের প্রথম সপ্তাহে পরপর তিনটি ঝঞ্ঝার জেরে কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে প্রবল তুষারপাত হয়েছে। কনকনে ঠান্ডা পড়েছে উত্তর-পশ্চিম ভারতে। সেখান থেকেই উত্তুরে হাওয়া বয়ে আসছে পূর্ব ভারতের দিকে।

তা হলে এখানে রাতের তাপমাত্রা এখনও এমন ঊর্ধ্বমুখী কেন?

আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, পশ্চিমি ঝঞ্ঝা আদতে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া। তাতে জলীয় বাষ্প থাকে প্রচুর। তাই কোনও এলাকার উপর দিয়ে ঝঞ্ঝা বয়ে গেলে সেখানে দিনের বেলায় তাপমাত্রা কমে যায়। কিন্তু রাতে তাপমাত্রা বেশি থাকে। কুয়াশাও হয়। এমনকী ঝঞ্ঝা সরে যাওয়ার পরেও হাল্কা কুয়াশার ভাবটা থেকেই যায়। তাই ঝঞ্ঝা এ রাজ্যের দিকে সরে আসার ফলে এখানকার বাতাসে জোলো ঠান্ডা বেড়েছে। কিন্তু রাতের তাপমাত্রা এখনও কমেনি।

হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আজ, বুধবার ঝঞ্ঝাটি আরও সরে যাবে। কাল, বৃহস্পতিবার থেকেই তাপমাত্রা ঝুপ করে নেমে যাবে। এবং শুক্রবার থেকেই মহানগরে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়তে পারে। পশ্চিমের জেলাতেও হাড়-কাঁপানো ঠান্ডার ইঙ্গিত রয়েছে। বাঁকুড়া, বীরভূমে রাতের তাপমাত্রা ৯-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে। কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকাতেও রাতের তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করবে বলে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন