হালকা মেজাজে নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
পুরসভায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগের দিন যতটা চিন্তিত বাম ও তৃণমূল নেতারা, ঠিক ততটাই খোশমেজাজে একমাত্র নির্দল প্রার্থী অরবিন্দ ঘোষ (অমু)। বামেরা যেখানে দল ভাঙতে পারে আশঙ্কায় কাউন্সিলরদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেখানে তিনি দিব্যি নিজের মেজাজেই। সোমবার শপথ, তিনি যাবেন। এর বাইরে ভাবতে নারাজ অমুদা।
বামেদের আকাঙ্খিত সমর্থনের বিষয়টি আগেই পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন, তাই কোনও রকম চাপে পড়তে রাজি নন তিনি বলে সাফ জানিয়ে দিলেন। বোর্ড গঠন হয়নি, কাউন্সিলর হিসেবে কার্যক্রমও শুরু হয়নি। তা সত্ত্বেও নিজের এলাকায় পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন জয়ের দিন থেকেই। এ দিনও হাই প্রোফাইল শপথের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও তিনি নির্বিকার দৌড়েছেন পাড়ার এক প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।
‘অমুদা’কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না বলে জানালেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি আমার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জানিয়েছি যে বামফ্রন্টকে সমর্থন করছি। তারপরে আর তা নিয়ে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অন্য কে কী ভাবছে তা নিয়ে চিন্তা করছি না। আমার কাজ মানুষকে পরিষেবা পাইয়ে দেওয়া। সেটাই করতে চাই।’’ এর আগে বামফ্রন্টকে সমর্থন দেওয়ার আগে তিনি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করেই সমর্থনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। ফলে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এলাকায় কোনও প্রশ্ন নেই। তাঁর কাছে শপথ গ্রহণ ও ভোটদান একটা রুটিন কাজের বাইরে কিছু নয় বলেই তাঁর মনোভাব।
এ বারের পুরভোটে অরবিন্দবাবু শিলিগুড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। এক সময় তাঁকে হারাতে দাঁড়ানোর কথা ছিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের। তিনি দাঁড়াচ্ছেন ধরে নিয়ে প্রচারও শুরু করেন। পরে দলের সিদ্ধান্তে তিনি প্রার্থী হওয়া থেকে সরে আসেন। তাঁর বদলে প্রার্থী হন ওয়ার্ডের গতবারের কাউন্সিলর তৃণমূলের মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী। যদিও পরিচ্ছন্ন ব্যবধানে জয়ী হন অরবিন্দবাবু। ফল প্রকাশের পর দেখা যায় পুরসভার ৪৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩ টি বামফ্রন্ট, ১৭ টি তৃণমূল, ৪ টি কংগ্রেস ও ২ টি ওয়ার্ডে বিজেপি জয়ী হয়। হিসেব করে দেখা যায় ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে বামেদের যেমন ১ টি আসন প্রয়োজন, তেমনই বাম বিরোধীরা যদি একজোট হন তবুও তাঁদের অরবিন্দবাবুর সমর্থন দরকার। এর পরে, তাঁকে নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য তিনি বামেদের সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন। তা লিখিতভাবে জানিয়েও দেন। সমর্থনের বিনিময়ে তিনি একগুচ্ছ উন্নয়নের শর্ত দেন। যা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও তৃণমূলের তরফে তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়েছে। এমনকী বাম কাউন্সিলরদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও এ সব থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন শিলিগুড়ির একমাত্র নির্দল কাউন্সিলর। ভোট নিয়েও যাঁর কোনও হেলদোল নেই। তিনি যেন সব ঠিক করেই রেখেছেন, যা শুধু কাজে পরিণত করা সময়ের অপেক্ষা। সকাল থেকেই পাড়াতেই দিন কাটালেন।
বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, ভোটার কার্ডে ও আধারের নম্বর সংযুক্তিকরণ করতে হবে। রবিবার সকালেই তিনি হাজির হয়ে সেই কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে ফেলতে। স্থানীয় উদয়ন সমিতি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেল তিনি লোকজন নিয়ে দুটি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহ করছেন। হঠাৎ জারি হয়েছে নোটিশ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোকে কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। তিনি নিজেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে খবর দিয়ে স্কুল খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানালেন। সকাল থেকে বিকেল তিনি উদয়ন সমিতি ও বিবেকানন্দ স্কুলে পালা করে হাজিরা দিলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ অশোক ভট্টাচার্যের ফোন। সব ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলেন অশোকবাবু।
অরবিন্দবাবু তখন হাসছেন। বললেন, ‘‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক আছি।’’ বিকেলে বাড়ি গিয়ে খাওয়া ও ঘন্টাখানেক বিশ্রাম। তার পরে ফের ছুটলেন নিজের দৈনন্দিন কাজে।