তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে আগামী শুক্রবার কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি বিরোধীদের। তার আগের দিন ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে যোগ দেবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে ৮ অগস্ট, শুক্রবার দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করতে চলেছে বিরোধীরা। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষায় (এসআইআর) ‘কারচুপির’ অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। তার আগে ৭ অগস্ট দিল্লিতে বৈঠকে বসতে চলেছেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-এর শরিকনেতারা। সেই বৈঠকে যোগ দেবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই তাঁর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। বৈঠকের পরে নৈশভোজ রয়েছে বলে খবর। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে কমিশন ঘেরাও কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করতে পারেন বিরোধী নেতারা।
বাদল অধিবেশনের আগে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছিল বিরোধীরা। সেখানে পহেলগাঁও, এসআইআর নিয়ে আলোচনা হয়। সংসদে এ বিষয়ে কী ভাবে এনডিএ সরকারের উপরে চাপ তৈরি করা হবে, তা নিয়ে মূলত আলোচনা হয়। এ বার দিল্লিতে আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসতে চলেছে বিরোধীরা। একটি সংবাদমাধ্যমকে প্রথম এই বিষয়ে জানিয়েছেন ন্যাশনাল কংগ্রেস (এনসি) নেতা ফারুক আবদুল্লা। প্রসঙ্গত, আগামী শুক্রবার দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তার রূপরেখা তৈরি করা হতে পারে।
বিহারে এসআইআরে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। পরের বছর ভোট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ তিনটি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে। তাই এই এসআইআর নিয়ে ‘কারচুপি’-র অভিযোগের বিষয়টি জাতীয় স্তরে নিয়ে যেতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পাশাপাশি এই বিষয়টি নিয়ে সরব তামিলনাড়ু, কেরলের শাসকদলও। ওই দুই অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যেও রয়েছে ভোট। মনে করা হচ্ছে, বিরোধীরা এক সঙ্গেই এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে সরব হতে চাইছে।
৮ তারিখের কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে অভিষেকের। দিন তিনেক আগে অভিষেককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কমিশন কি ঘেরাও হবে? সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘হবে, ঠিক সময় জানতে পারবেন।’’ মনে করা হচ্ছে, এই কর্মসূচিতে অভিষেকের একটা ভূমিকা থাকতে পারে। ৮ অগস্ট চার হাজার তৃণমূল নেতাকে নিয়ে অভিষেকের ভার্চুয়াল বৈঠক করার কথা ছিল। কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি স্থির হওয়ার পরে সেই বৈঠক এগিয়ে এসেছে। হতে চলেছে আগামী মঙ্গলবার, ৫ অগস্ট। তার পরেই ৭ অগস্ট বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে যোগ দিতে চলেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই মমতা বলেছিলেন, দরকারে কমিশনের দফতর ঘেরাও করবে তৃণমূল। তিনি জানিয়েছিলেন, বাংলায় এসআইআর-এ বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হলে প্রতিবাদ হবেই। গত বৃহস্পতিবার লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুলের উপস্থিতিতে ‘ইন্ডিয়া’-র সংসদীয় দলের নেতাদের বৈঠকে তৃণমূলনেত্রীর ওই প্রস্তাবই পেশ করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তা গৃহীত হয়। এ বার আগামী শুক্রবার সেই ঘেরাও কর্মসূচি রয়েছে বিরোধীদের।
সূত্রের খবর, বিরোধী নেতাদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করেছেন রাহুল। সেখানে এই কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ৯ অগস্ট উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সূত্রের খবর, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে। এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে যে ‘কারচুপি’র অভিযোগ উঠেছে, ওই বৈঠকে সেই সংক্রান্ত কিছু ‘প্রমাণ’ রাহুল পেশ করতে পারেন বলে খবর। শনিবার কংগ্রেস সাংসদ অভিযোগ করেছিলেন, গত লোকসভা নির্বাচনেও এই ‘কারচুপি’ হয়েছিল দেশের অন্তত ৭০ থেকে ১০০টি লোকসভা আসনে।
কেন্দ্রীয় সরকার যদিও প্রায় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সংসদে এসআইআর নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা নেই। অতীতে নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা চেয়ে সংসদে নোটিস দিয়েছিলেন সিপিএমের বাসুদেব আচার্য। সেই আবেদন খারিজ করেছিলেন তৎকালীন স্পিকার বলরাম জাখর। মনে করা হচ্ছে, চলতি বাদল অধিবেশনেও কমিশনের কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা হবে না। ২১ অগস্ট পর্যন্ত চলবে সংসদের অধিবেশন। এসআইআর নিয়ে আলোচনা না হলে সেই অধিবেশন যে মসৃণ ভাবে চলবে না, তার ইঙ্গিত একপ্রকার দিয়ে রেখেছে বিরোধীরা। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।