কন্যাশ্রী-সবুজসাথীর গুণগান পটে, পুতুলে

সরকারের প্রকল্পে পুতুল বা পটচিত্রের এই অংশগ্রহণ অবশ্য খুব নিষ্কণ্টক হচ্ছে না। ছোটখাটো খোঁচা থাকছেই। কয়েকশো বছরের পুরনো বাংলার পটচিত্র ও পুতুলের মাধ্যমে পৌরাণিক গল্পের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাও বারবার উঠে এসেছে।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০৪:২৭
Share:

অভিনব: প্রচারে পুতুল। —নিজস্ব চিত্র

মেলার পাঠে পটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন পিংলার মণিমালা চিত্রকর। চোখ বন্ধ করে গাইছেন, ‘শোনেন দাদাভাই, শোনেন দিদিভাই, কন্যাশ্রী প্রকল্পের কথা আমরা বলে যাই।’ সামনে ভিড়। কন্যাশ্রীর গুণকীর্তন শেষ হওয়ার পরে শুরু হল সবুজসাথী প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য-বর্ণন। অদূরে পুতুল সাজিয়ে বসে আছেন কোচবিহারের নিশারানি রায়। তাঁর পুতুলেরাও কন্যাশ্রীর গল্পই শুনিয়ে চলেছে।

Advertisement

শুধু মেলার মাঠ নয়। সরকারি অনুষ্ঠান, স্কুল-চত্বর, সরকারি হাসপাতাল, বাজার-সহ বিভিন্ন জায়গায় রাজ্য সরকারের এই দুই প্রকল্পকে তুলে ধরতে ব্যবহার করা হচ্ছে পটশিল্পী ও পুতুল-শিল্পীদের। বস্তুত, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের হাত ধরেই এ বার এই দারিদ্রে ডুবতে বসা শিল্পীরা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন বলে সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে। মাসে মাসে হাজার টাকা ভাতা তো জুটছেই। সেই সঙ্গে ঘনঘন অনুষ্ঠানের ডাকও আসছে। বছর তিনেক আগে ডাক পাওয়া শুরু হয়েছিল। ক্রমশ তার সংখ্যা বাড়ছে।

সরকারের প্রকল্পে পুতুল বা পটচিত্রের এই অংশগ্রহণ অবশ্য খুব নিষ্কণ্টক হচ্ছে না। ছোটখাটো খোঁচা থাকছেই। কয়েকশো বছরের পুরনো বাংলার পটচিত্র ও পুতুলের মাধ্যমে পৌরাণিক গল্পের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাও বারবার উঠে এসেছে। এ বার সেখানে সরকারি প্রকল্পকে ঠাঁই দেওয়ায় প্রশ্নও উঠছে বিস্তর। অনেকে বলছেন, অনুষ্ঠানের টোপ দিয়ে কি তা হলে এই দুই প্রাচীন লোকশিল্পকেও সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হচ্ছে?

Advertisement

অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উপ-অধিকর্তা বাসুদেব ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো শুধু সরকারি প্রকল্পের কথা বলা নয়। সমাজ সচেতনতাও বটে। কন্যাসন্তানদের দিক থেকে সমাজ যাতে মুখ না-ঘোরায়, সেই জন্যই প্রচার। আমরা তো এই শিল্পীদের মাধ্যমেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারছি।’’

আরও পড়ুন:নীতি আয়োগকে দুষে চিঠি বিএমএসের

সরকারি সূত্রের খবর, পট ও পুতুল তৈরির সরঞ্জাম ছাড়াও সরকারি তরফে অনুষ্ঠানে যাওয়ার গাড়ি-ভাড়া ও অনুষ্ঠান-পিছু হাজার টাকা দেওয়া হয়। সব শিল্পীই এখন মাসে একাধিক অনুষ্ঠান পাচ্ছেন।

পিংলার মণিমালা কিংবা স্বর্ণ চিত্রকর তাই স্বীকার করছেন, সরকারি সহায়তায় রোজগারের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের শিল্পী-সত্তাটাকেও বাঁচানোর সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা। মণিমালার কথায়, ‘‘শুধু আর্থিক সমস্যা নয়। কদর কমে যাওয়াটা শিল্পী হিসেবেও অপমান। আমরা সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি।’’ লোকশিল্পের গবেষক সোমা মুখোপাধ্যায়ও জানাচ্ছেন, সরকারি তরফে পট বা পুতুল তৈরির টাকা না-জোগালে বা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা না-করলে বহু শিল্পীই হারিয়ে যেতেন।

লোকশিল্পকে তুলে ধরতে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে একাধিক বেসরকারি সংগঠনও। এমনই একটি সংগঠনের কর্ণধার অমিতাভ ভট্টাচার্য জানান, শুধু সরকার় নয়। একাধিক বেসরকারি সংস্থাও নিজেদের প্রচারের কাজে লোকশিল্পকেই ব্যবহার করছে। ‘‘শিল্পীর দক্ষতা বাড়িয়ে বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়াটাই মূল কাজ। এ ক্ষেত্রে সরকারই যদি বাজার হয়ে ওঠে, সেটা তো শিল্পীর পক্ষে মঙ্গল। এর পরে বনবিবির পালা এবং ঝুমুরেও উঠে আসবে কন্যাশ্রী আর সবুজসাথীর মতো প্রকল্পের কথা,’’ বলছেন অমিতাভবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন