আইবি-র চোখকান

গোয়েন্দাগিরির কাজে এ বার আধা পুলিশও

এদ্দিন কাজ বলতে ছিল ভিড় সামলানো আর রাস্তায় নজরদারি। গাড়িঘোড়া যাতে ঠিক মতো চলে, সেটা দেখা। কিন্তু এখন রীতিমতো গোয়েন্দাগিরিও করতে হবে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

এদ্দিন কাজ বলতে ছিল ভিড় সামলানো আর রাস্তায় নজরদারি। গাড়িঘোড়া যাতে ঠিক মতো চলে, সেটা দেখা। কিন্তু এখন রীতিমতো গোয়েন্দাগিরিও করতে হবে।

Advertisement

তা বলে ব্যোমকেশ-ফেলুদা বা কিরীটীর মতো জটিল রহস্যের সমাধান করার দরকার নেই। ছদ্মবেশও ধরতে হবে না। এখানে গোয়েন্দাগিরি মানে স্রেফ চোখ-কান খোলা রেখে নিজের তল্লাটের খবর নেওয়া। এবং খবর জায়গা মতো পৌঁছে দেওয়া। চালু ভাষায়, ওঁদের এ বার ‘টিকটিকি’ও হতে হবে।

ওঁরা, অর্থাৎ সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। যাঁরা কিনা ‘আধা পুলিশ’ হিসেবে গণ্য। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-র চরবৃত্তির কাজে তাঁদেরও সামিল করা হচ্ছে। বলা ভাল, সামিল করতে হচ্ছে। আইবি’র ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে। কী রকম ব্যর্থতা?

Advertisement

নানা ক্ষেত্রে নানা রকম। কখনও মাওবাদী দম্পতি বিকাশ-তারার জঙ্গলমহলে ঘোরাফেরা নিয়ে ভুলভাল ‘ইনপুট’ ফলাও করে দেওয়া হয়েছে। অথচ বর্ধমানের এক হাইস্কুল শিক্ষকের সন্দেহজনক আচরণ সম্পর্কে এসপি’র হুঁশিয়ারি-চিঠি পাওয়া সত্ত্বেও আইবি তার তাৎপর্য ধরতে পারেনি! পারল আরও অনেক পরে, যখন খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার তদন্তে জিয়াউল হক নামে ওই শিক্ষক গ্রেফতার হলেন! অভিযোগ, রাজ্যের অন্তত পাঁচটি জেলায় জেএমবি’র ‘নেটওয়ার্ক’ সম্পর্কে সম্যক ধারণাও আইবি’র ছিল না। তারা এ-ও জানতে পারেনি যে, বীরভূমের লাভপুরের যুবক মুসা দু’-তিন বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে আইএস এজেন্ট হিসেবে সক্রিয় ছিল।

এত কিছুর পরেও গয়ংগচ্ছ ভাবে দিব্যি চলে যাচ্ছিল। তবে আর সম্ভবত যাবে না। কারণ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ধাঁচে আইবি-ও প্রতি জেলায় গড়েছে লোকাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এলআইইউ)। ওই খাতে রাজ্য সরকার আলাদা অর্থ বরাদ্দ করছে। জঙ্গি দমনের লক্ষ্যে আইবি-তে পুরোদস্তুর একটা সেল-ও তৈরি হয়েছে, যার অঙ্গ হিসেবে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা কাজ করবেন। ধরে নেওয়া হচ্ছে, স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে ওঁরা তৃণমূলস্তর থেকে খবর জোগাড় করতে পারবেন।

উপরন্তু রয়েছে কর্মীর অভাব। একেই নতুন নিয়োগ বাড়ন্ত। পুলিশের অন্য সংস্থা থেকে লোক চেয়েও বিশেষ লাভ হচ্ছে না। সোজা কথায়, আইবি ঢেলে সাজতে হলে লোকবল যতটা দরকার, ততটা নেই। সিভিক ভলান্টিয়ারদের উপরে নির্ভরতার এটাও বড় কারণ বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তাদের অনেকে।

সিভিক পুলিশকে গোয়েন্দাগিরির ময়দানে নামানো হবে কী ভাবে?

পুলিশ-সূত্রের খবর: রাজ্যে এখন সিভিক ভলান্টিয়ারের সংখ্যা লক্ষাধিক। এঁরা বিভিন্ন কমিশনারেট ও এসপি-দের অধীনে কর্মরত। এঁদের মধ্য থেকে ‘চৌখস’দের বেছে নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। চরবৃত্তির তালিম। ‘‘ট্রেনিংয়ে শেখানো হবে, সন্দেহজনক কিছু দেখার চোখ ও শোনার কান কী ভাবে তৈরি করতে হয়।’’— বলছেন এক গোয়েন্দাকর্তা। কর্তৃপক্ষের হিসেবে, এই প্রক্রিয়ায় থানাপিছু দশ জন আধা পুলিশের দল গঠন করা যাবে, যাদের কাজ হবে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ। তালিমপ্রাপ্ত সিভিক পুলিশেরা তখন সরাসরি আইবি-র অধীনেই কাজ করবেন। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার আশা, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে আইবি’র সোর্স নেটওয়ার্কের খামতি হয়তো কিছুটা মেটানো যাবে।’’

তবে সংশয়ও বহাল। সম্প্রতি খাস কলকাতায় তিন মদ্যপ সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে এক পুলিশ সার্জেন্টকে মারধর ও তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এমতাবস্থায় গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহের মতো স্পর্শকাতর কাজের দায়িত্ব সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিলে বিপদের ঝুঁকি থাকবে না?

রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার জবাব, ‘‘আইবি’র অধীনে কাজ করবেন যাঁরা, তাঁদের বাছাই করার সময়ে আমরা বাড়তি সতর্ক থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন