বিরোধী নেই, শত্রু ঘরেই

হুগলির ১৩টি পুরসভার মধ্যে ১২টিতেই সরাসরি জিতে গিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। ভদ্রেশ্বরে ত্রিশঙ্কু। ডানকুনিতে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিরোধীরা। কিন্তু দুই বিরোধীশূন্য পুরসভাতেও স্বস্তিতে নেই তৃণমূল। কেন না দলের অন্দরে বিরোধ প্রকট। নদিয়াতেও হরিণঘাটার মতো বিরোধীহীন পুরসভায় একই প্রবণতা মাথাচাড়া দিচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:০২
Share:

নদিয়ায় তৃণমূলের এই উচ্ছ্বাস ছাপিয়ে উঠেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের টানাপড়েন।—ফাইল চিত্র।

হুগলির ১৩টি পুরসভার মধ্যে ১২টিতেই সরাসরি জিতে গিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। ভদ্রেশ্বরে ত্রিশঙ্কু। ডানকুনিতে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিরোধীরা। কিন্তু দুই বিরোধীশূন্য পুরসভাতেও স্বস্তিতে নেই তৃণমূল। কেন না দলের অন্দরে বিরোধ প্রকট। নদিয়াতেও হরিণঘাটার মতো বিরোধীহীন পুরসভায় একই প্রবণতা মাথাচাড়া দিচ্ছে।

Advertisement

এ বারের পুরভোটে রাজ্যের যে ক’টি পুরসভায় বিরোধীরা খাতা খুলতে পারেনি, তার অন্যতম হুগলির আরামবাগ ও তারকেশ্বর। ইত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি, নদিয়ার কল্যাণী, গয়েশপুর, হরিণঘাটা এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরেও একই অবস্থা। কিন্তু তাতেও সর্বত্র শান্তিতে থাকতে পারছে না তৃণমূল।

তারকেশ্বর পুরসভায় গত বার পুরপ্রধান ছিলেন স্বপন সামন্ত, উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডু। গত পাঁচ বছর বারবারই দুই নেতার মধ্যে পুরবোর্ড পরিচালনা নিয়ে সংঘাত বেধেছে। তা মেটাতে দলের জেলা এবং রাজ্য কমিটিকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এ বার টিকিট পাওয়া এবং তার পরবর্তী সময়েও সেই বিবাদ থেমে থাকেনি। তাতে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হয়েছে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Advertisement

এখন তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, গত পুরবোর্ডের সংঘাতের অভিজ্ঞতার পরে দল কি ফের পুরনো জুটিই রাখবে? না কি নতুন কাউকে দায়িত্বে আনবে? তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, গত বারের পুরপ্রধানকে রাখতে আগ্রহী দল। কিন্তু উপ-পুরপ্রধানের নেতারা দ্বিধাগ্রস্ত। অপর একটি অংশের মত অবশ্য ভিন্ন। তাঁদের দাবি, উত্তমবাবুকে সরানোর ফল হবে মারাত্মক। তাঁকে পুরনো দায়িত্বে ফেরানো না হলে পুরবোর্ডের কাজে প্রতি পদে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন তিনি। তাতে হিতে বিপরীত হবে। বিরোধী সামলাতে হচ্ছে না, কিন্তু এই ভারসাম্য রক্ষার ট্রাপিজও তৃণমূলের কাছে কম কঠিন নয়।

একই রকম সমস্যা আরামবাগের ক্ষেত্রেও। সেখানে গত পুরবোর্ডের প্রধান ছিলেন স্বপন নন্দী। কিন্তু এবার তাঁর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন দলেরই গুরুত্বপূর্ণ নেতা সমীর ভান্ডারী। দলের অন্দরের খবর, স্বপনবাবু চাইছেন তাঁর পুরনো দায়িত্ব। তবে দলের অন্দরের খবর, স্বপনবাবুকেও সুযোগ দেওয়া হতে পারে। কেননা আরামবাগে সিপিএম থেকে ভাঙিয়ে গত পুরবোর্ডের মাঝপথে তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনার নেপথ্যে স্বপনবাবুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেই কথা মাথায় রেখে তাঁকেই পুরপ্রধানের পদে বসানো উচিত বলে দলের একটি অংশের দাবি। অর্থাৎ এখানেও সেই ভারসাম্য টিঁকিয়ে রাখার পাটিগণিত।

নৈহাটি, কল্যাণী বা গয়েশপুরে এখনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাইরে মাথাচাড়া দিয়ে নির্ণায়ক ভূমিকা না নিলেও হরিণঘাটায় তৃণমূলের বিপদের কারণ হতে পারে প্রাক্তন পুরপ্রধান ও নতুন ব্লক সভাপতির দ্বন্দ্ব। মাস দেড়েক আগে সেখানে ব্লক সভাপতি দিলীপ রায়কে পদচ্যুত করে জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথকে তাঁর জায়গায় বসানো হয়েছিল। এ বার ভোটে দিলীপবাবুই তৃণমূলের প্রধান মুখ হলেও ভোট পরিচালনার রাশ ছিল চঞ্চলবাবুর হাতেই। কোনও বিরোধী নেই বটে, কিন্তু এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব তৃণমূল কী ভাবে সামাল দেয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন