দেগঙ্গায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মার খাচ্ছেন তৃণমূল নেতা অজয় বৈদ্য। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েই আর ক্ষান্ত থাকছেন না তৃণমূল সমর্থকেরা। এ বার লাঠালাঠিও শুরু হয়েছে নিজেদের মধ্যে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন বা মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের পরে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গাতেও মঙ্গলবার এ রকমই দৃশ্য দেখলেন এলাকার মানুষ।
প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পর থেকেই অন্য অনেক এলাকার মতো দেগঙ্গাতেও দলীয় প্রার্থী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা বিবির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। এই বিক্ষোভের মধ্যেই কয়েক দিন আগে এলাকায় প্রচারে গিয়ে চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন রহিমা বিবি। অভিযোগ ওঠে, বিক্ষুব্ধ দলীয় কর্মীদের একাংশই চেয়ারটি সরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে রহিমা বিবি বার বার বোঝাতে চেষ্টা করেন, চেয়ারটি কেউ সরাননি। তিনিই ঠিকমতো বসতে পারেননি। এতে অবশ্য তৃণমূল কর্মীদের একাংশে বিক্ষোভ ধামাচাপা দিতে পারেননি তিনি। দেগঙ্গার আসনে
তৃণমূলের প্রার্থী পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন দলের ব্লক সভাপতি মিন্টু সাহাজি। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, টিকিট না পেয়ে মিন্টুই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে মিটমাট করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে রহিমা বিবিকে।
এর সমাধানে দেগঙ্গায় রহিমা ও মিন্টুকে নিয়ে সভা ডেকেছিলেন তৃণমূলের নেতারা। সভায় ছিলেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার ও তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ। তাঁদের সামনেই ঘটে গেল হাতাহাতি। অভিযোগ, সভায় রহিমা বিবির সমর্থক অজয় বৈদ্য-সহ কয়েক জনকে মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় তাঁর পোশাকও। রহিমা বিবির সমর্থকদের একাংশকে রীতিমতো তাড়া করে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। জখম অজয় ও তাঁর সঙ্গীরা পরে দেগঙ্গা থানায় গিয়ে মিন্টু ও তাঁর দলবলের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে মিন্টু মাইক্রোফোন হাতে সভা পরিচালনা করছিলেন। অজয় ও তাঁর সঙ্গীরা রহিমার নামে স্লোগান দিতে দিতে সভায় আসছিলেন। মিন্টু তাঁদের স্লোগান থামিয়ে সংযত হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতে ওই নেতা-কর্মীদের উৎসাহে ভাটা পড়েনি। অভিযোগে অজয়বাবু জানান, মিন্টুর নির্দেশেই মিছিলের উপরে চড়াও হয় কয়েক জন।
পুলিশ ও তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনার সময়ে কয়েক জন নেতা গোলমাল থামানোর চেষ্টা করেন। বিধ্বস্ত অবস্থায় মঞ্চের দিকে আসেন অজয়বাবু। তাঁকে মঞ্চে উঠে আসতে বলেন রহিমা। অভিযোগ, মিন্টুর লোকজন শাসানি দিয়ে বলে, অজয় মঞ্চে উঠলে আরও গোলমাল হবে। বিপক্ষ গোষ্ঠীর রণংদেহি মূর্তি দেখে পিছু হঠেন অজয়রা।
এই মারপিটের ঘটনায় অবশ্য সভা বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে সভায় মন্তব্য করেননি জেলার নেতারাও। খোদ রহিমা বা মিন্টুর মুখেও এই নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়নি। কাকলিদেবী পরে বলেন, ‘‘সভায় অনেক লোক ছিল। পিছনের দিকে কী হয়েছে, জানি না। সামনে তো কিছু হয়নি!’’ অজয়বাবু অবশ্য থানা থেকে বেরিয়েই বলেন, ‘‘নেতাদের সামনেই পরিকল্পনা করে হামলা চলেছে।’’