CITU West Bengal

সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনে ডামাডোল! পদত্যাগ করতে চান সিটু সভাপতি, মধ্যস্থতা করার চেষ্টায় আলিমুদ্দিন

সুভাষ মুখোপাধ্যায় বেলঘরিয়ার লোক। উত্তর ২৪ পরগনাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক চারণভূমি। গত সম্মেলনে তাঁকে সিটুর রাজ্য সভাপতি করেছিল সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, সুভাষের রাগ-ক্ষোভ অনেক পুরনো।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৫
Share:

সিটুর রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটিতে ডামাডোল বেধেছে। সিপিএম সূত্রে খবর তেমনটাই। জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি এমনই যে, নেতৃত্বের সঙ্গে বনিবনার অভাবের কারণে সিটুর রাজ্য সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। যদিও সুভাষ প্রকাশ্যে বিষয়টি অস্বীকারই করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ সব একেবারে ভুল কথা! কারা যে রটায় কে জানে!’’

Advertisement

তবে সংগঠনের অভ্যন্তরে কী হয়েছে, সুভাষ কী বলেছেন, তা যে তিনি নিজে প্রকাশ্যে বলবেন না, তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু সিপিএমের অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন, সিটুর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে দলের রাজ্য কমিটিকে। সিপিএম সূত্রের খবর, সুভাষের ইস্তফাপত্র নিয়ে রাজ্য সিপিএমের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। জানা গিয়েছে, ‘ফ্র্যাকশন কমিটি’র বৈঠক করে সুভাষকে অনুরোধ করা হয়েছে, এখনই তিনি যেন ওই সিদ্ধান্ত না নেন। পরের বছর সিটুর রাজ্য সম্মেলন। সেই মঞ্চ থেকে তিনি ‘সসম্মানে’ সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিন।

সিপিএম সূত্রের আরও খবর, সুভাষ মাঝে মেজাজ নিয়ে সভাপতি পদ ছাড়ার ব্যাপারে কার্যত গোঁ ধরে বসে থাকলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপের পর কিছুটা নরম হয়েছেন। যে সূত্রে সিটুর উত্তর ২৪ পরগনার এক নেতা রসিকতা করে বলেন, ‘‘কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘এখন কে যায়’। সেই কবিতার শেষ লাইন ছিল— ‘এমন মজার খেলাঘর ছেড়ে, দূর! এখন কে যায়’। আমাদের ঝন্টেদাও (সিটু নেতা সুভাষের ডাকনাম) হয়তো তেমনই ভাবছেন। কারণ সামনের বছরেই সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন।’’

Advertisement

সুভাষ বেলঘরিয়ার লোক। মূলত উত্তর ২৪ পরগনাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক চারণভূমি। কিন্তু গত সম্মেলনে তাঁকে সিটুর রাজ্য সভাপতি করেছিল সিপিএম। দলীয় সূত্রের খবর, সুভাষের রাগ-ক্ষোভ অনেক পুরনো। তিনি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি হলেও বয়সবিধির কারণে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য নন। এমনকি, রাজ্য সিপিএমের ট্রেড ইউনিয়ন সাব কমিটিরও তিনি ‘স্থায়ী সদস্য’ নন। সেখানেও তিনি ‘আমন্ত্রিত’। এ নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিক বার তাঁর উষ্মার কথা জানিয়েছেন সুভাষ।

সুভাষের ইস্তফা দিতে চাওয়ার ইচ্ছার নেপথ্যে একটি ‘রাজনীতি-বহির্ভূত’ কারণও সিপিএমের অন্দরে শোনা যাচ্ছে। তবে তা একেবারেই অসমর্থিত সূত্রের খবর। সেটি নিয়ে বিশেষ আলোচনা করতে রাজি নন দলীয় নেতৃত্ব। তাঁরা চাইছেন, রাজ্য সম্মেলনের আগের বছর সংগঠনের সর্বোচ্চ পদে যেন ইস্তফার ‘কালি’ না-লেগে যায়। সিপিএম সূত্রে এ-ও খবর, শেষ পর্যন্ত সুভাষবাবু যদি একান্তই সভাপতি পদে থাকতে না চান, তা হলে আভাস রায়চৌধুরী অথবা চা-বলয়ের নেতা জিয়াউল আলমকে ওই পদে আনতে পারে সিপিএম। সে ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। তবে আলিমুদ্দিন চাইছে সম্মেলন পর্যন্ত স্বপদেই থাকুন সুভাষ।

রাজ্য সিটুর ভূমিকা নিয়ে সিপিএমের মধ্যেও সমালোচনার চোরাস্রোত রয়েছে বলেই খবর। শ্রমিক শ্রেণির পার্টি সিপিএমে শ্রমিক ফ্রন্টেরই ‘দৈন্যদশা’ নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় আক্ষেপ গোপন করেন না অনেক নেতাই। সিপিএমের এক রাজ্য কমিটির সদস্য যেমন মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘সরকারে থাকার সময় বাস-অটো ইউনিয়নকেই ট্রেড ইউনিয়নের নিউক্লিয়াস ভেবে নেওয়া হয়েছিল। সেটাই কাল হয়েছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement