রবিবার আলিপুরদুয়ার আদালত চত্বরে রক্তচন্দন কাঠ পাচারে ধৃতেরা। ছবি: নারায়ণ দে।
রক্তচন্দন পাচারে নাম জড়ানোর পরে এ বার তৃণমূল বিধায়কের পরিজনদের আড়াল করার অভিযোগ উঠল। চন্দন পাচারে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতের আবেদনই করল না বন দফতর। আদালতেও দেখা মিলল না সরকারী আইনজীবীরও। বিরোধীদের অভিযোগ, ধৃতরা কালচিনির বিধায়ক উইলসনের বাবা সুবিন চম্প্রমারির নাম বলাতেই শাসক দলের নির্দেশে হাজির থাকেননি সরকারি আইনজীবী। উপরমহলের চাপ থাকাতেই ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরার সাহস বনকর্তারা দেখাতে পারেননি বলে দাবি বিরোধীদের। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন এ বিষয়ে বলেন, “বন ও বন্যপ্রাণ রক্ষার জন্য রাজ্য ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ড ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট গঠন করেছে। তারা তাদের কাজ করছে। এর বেশি কিছু বলব না।”
শনিবার জয়গাঁর পশ্চিম সাতালি গ্রামে যৌথ অভিযানে প্রায় এক কোটি টাকার রক্তচন্দন কাঠ উদ্ধার করে বন দফতর ও সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি)। সংবাদমাধ্যমের সামনে ধৃতেরা জানায়, উইলসনের বাবা সুবিন চম্প্রমারির নির্দেশেই তাঁরা ওই কাঠ রেখেছিলেন। রবিবার আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত মুখ্যবিচার বিভাগীয় আদলতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অনীক বন্দ্যোপাধ্যায় ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নিদের্শ দেন। ধৃতদের আইনজীবী অনন্ত সরকার বলেন, “১ অগস্ট ফের ধৃতদের আদালতে আনা হবে।”
এ দিন সরকারি আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ফের সরব বিরোধীরা। কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করলেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়বে বেড়াল। তা-ই বন দফতর ধৃতদের হেফাজতে চায়নি। আদালতেই একই কারণে উপস্থিত হননি সরকারী আইনজীবী।” বিজেপির জেলা সভাপতি গুণধর দাস বলেন, “রক্তচন্দন পাচার কাণ্ডে শাসক দলের বিধায়কের নাম আগেই জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ফের এক বার তা প্রমাণ হল। পুলিশ ও বন দফতর কী করে সেটাই দেখার।” আরএসপির প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাসের অভিযোগ, “শাসক দলের মদতেই রক্তচন্দন পাচার হচ্ছে। তা জেনেই চুপচাপ পুলিশ ও বন দফতর।”
তবে যেহেতু কাঠ উদ্ধার হয়েছে এবং ধৃতরা জেরায় বেশ কিছু নাম বলেছে সেজন্য তাঁদের হেফাজতে চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণ তিন বিভাগের ডিএফও ভাস্কর জেভি। তাঁর কথায়, “ধৃতদের জেরায় পাওয়া নামগুলি নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান করা হবে। তার পরে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব। প্রয়োজন পড়লে জেল হেফাজতে ধৃতদের জেরা করা হবে।” আদালতে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি সরকারী আইনজীবী চমন রাই।
এ দিন আবার ধৃত রমল কার্জি এবং মালতি নার্জিনারি আদালত থেকে বের হবার সময় জানান, কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি ও তাঁর বাবা সুবিন চম্প্রমারি তাঁদের দূর সর্ম্পকের আত্মীয় হন। রমল বলেন, “সুবিন চম্প্রমারি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, এই কাঠের নথি রয়েছে। আমার কাছে তা রাখতে।” মালতি জানান, ওই কাঠ রাখার জন্য প্রেম লামা বলে এক ব্যক্তি তাঁকে বলেছিল। ঘটনায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করলেও প্রভাবশালীদের নাম বলতে চাননি।
দক্ষিণ ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার হয়ে ভুটানে রক্তচন্দন পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে কিছুদিন আগে নবান্নে একটি নোট পাঠিয়েও ওই ‘করিডর’ ধরে পাচারের খবরও জানানো হয় বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। সেই নোটে উইলসন ও তাঁর পরিবারের নাম উল্লেখ ছিল বলে জানা গিয়েছিল আগেই। তখনই বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিলেন বিরোধীরা। এ দিন অবশ্য সুবিন ফের রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “রক্তচন্দন আমার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়নি। পুলিশ তাহলে ফোন রেকর্ড দেখুক কবে ধৃত রমেল আমার সঙ্গে কথা বলেছে। আমার কাছে খবর আছে শনিবার এসএসবির চারজন সাদা পোশাকে রমেলকে চাপ দেয় আমার নাম বলার জন্য।” তবে ঘটনায় প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার অভিযোগ আদালত চত্বরে থাকা ধৃতদের পরিজনদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আত্মীয়দের অভিযোগ, ‘‘যে-হেতু প্রভাবশালীরা জড়িয়ে রয়েছে, তাই বন দফতর ও পুলিশ সব জেনেও চোখ বুজে রয়েছে।’’