বাংলায় লেখা তিন পাতার পুস্তিকা— ‘জেলের কমরেডদের প্রতি আহ্বান’। মাওবাদী দলের রাজ্য কমিটির ওই নথি থেকে তাদের এক নতুন কৌশল সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।
গত মাসে ওই পুস্তিকা হাতে পেয়ে গোয়েন্দাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হল, লালগড়কে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহলে জোরদার ধাক্কা সামলে এখন ঘর গোছানোর চেষ্টা করছেন মাওবাদীরা।
পুস্তিকায় সিপিআই (মাওবাদী) রাজ্য কমিটি বার্তা দিয়েছে, বিচারাধীন বন্দি হিসেবে বা দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে গেলেই ক্যাডারদের নাম খরচের খাতায় লেখা হবে না। বরং, জেলে যাঁরা আছেন, তাঁরাও দলের অপরিহার্য অঙ্গ। পার্টিলাইন অনুযায়ী ওই বন্দিরা জেলের মধ্যে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কার্যকলাপ করবেন জেলের বাইরে থাকা কমরেডদের সহযোগিতায়। এমন ভাবে বন্দিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, যাতে তাঁরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন বলে মনে না করেন। মাওবাদীদের একটি সূত্র বলছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলে মাওবাদী কার্যকলাপে অভিযুক্ত বন্দির সংখ্যা ৯০। এর মধ্যে ১৯ জন সাজাপ্রাপ্ত। বাকি ৭১ জন বিচারাধীন।
জেলবন্দি ক্যাডারদের প্রতি মাওবাদী রাজ্য কমিটির নির্দেশ, পার্টির পুস্তিকা পড়তে হবে, নিবন্ধ লিখতে হবে এবং জেলের মধ্যেই রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করতে হবে। বন্দি ক্যাডারদের আর্থিক সাহায্য দিতে বাইরে থাকা কমরেডদের তহবিল সংগ্রহের জন্য ঝাঁপাতে বলা হয়েছে। বন্দিদের জন্য পত্রপত্রিকা ও অন্য জিনিসপত্র নিয়মিত সরবরাহ করতে হবে ওই টাকায়।
এ ছাড়া জেলবন্দি ক্যাডারদের আইনি সহায়তা দেওয়ার কথাও ওই পুস্তিকায় বলা হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, এই পথেই কিছু দিন আগে পার্টির প্রাক্তন মুখপাত্র গৌর চক্রবর্তী মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
কেন এই উদ্যোগ?
গোয়েন্দাদের দাবি, দলের রাজ্য নেতা বলতে এখন অসীম মণ্ডল ওরফে আকাশ, মাধাই পাত্র এবং রঞ্জিত পাল ছাড়া তেমন কেউ নেই! আইবি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যে মাওবাদীদের সংগঠন ভেঙে গিয়েছে। জঙ্গলমহলেও জনসমর্থনের ভিত্তি আর নেই। এই অবস্থায় যে টুকু জনসমর্থন অবশিষ্ট রয়েছে, তাই আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছেন ওঁরা।’’ তাঁর বক্তব্য, জেল থেকে সাজা খেটে বেরোলে বা জামিন পেলে বা খালাস হলে ওই মাওবাদীরা যাতে দলের সঙ্গেই থাকেন, সেই জন্যই এই উদ্যোগ।
পুস্তিকায় আরও বলা হয়েছে, পার্টির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বন্দিদের সময় মতো জানাতে হবে। অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট, জরুরি তথ্য সংবলিত নথি, পার্টির পত্রপত্রিকা, মুখপত্র তাঁরা যাতে জেলে বসেই পেয়ে যান, সেটা নিশ্চিত করবেন জেলের বাইরে থাকা পার্টি ক্যাডাররা। রাজ্য কমিটির সাবধানবাণী, বন্দি মাওবাদীদের কার্যকলাপ জানতে শত্রুরা চর পাঠাতে পারেন। যাঁরা কাজ করবেন বন্ধুর ছদ্মবেশে। তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ?
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, জেলে নিয়মিত নজরদারি চলছে। তা ছাড়া, অর্ণব দাম ওরফে বিক্রমের মতো মাওবাদী নেতা বলেছেন, তাঁরা পার্টির কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। বিকাশ শারীরিক কারণে চার-পাঁচ বছর পার্টি থেকে দূরে। তা ছাড়া, বন্দি ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী-ও এখন সরকার-বিরোধী রাজনীতি থেকে দূরে সরে এসেছেন। ‘‘এই অবস্থায় জেলবন্দি সদস্যদের এই বার্তা দিয়েও খুব কি সুবিধা হবে মাওবাদীদের?’’— প্রশ্ন ওই পুলিশকর্তার।