খড়্গপুরে মৃত্যু রেলকর্মীর

তদন্তের নির্দেশ রেলমন্ত্রীর, প্রশ্ন পুলিশের ভূমিকায়

প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করলেও পরিবারের দাবি মেনে পরে খুনের মামলা দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ কুমারের মৃত্যু তদন্তে প্রথম থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গ্রেফতার তো দূর, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ এখনও কাউকে আটক না করায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে মৃতের পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করলেও পরিবারের দাবি মেনে পরে খুনের মামলা দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ কুমারের মৃত্যু তদন্তে প্রথম থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গ্রেফতার তো দূর, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ এখনও কাউকে আটক না করায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে মৃতের পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে।

Advertisement

২২ সেপ্টেম্বর রাতে খড়্গপুর শহরের গোলবাজার মসজিদ সংলগ্ন রেল কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার হয় সৌরভের পচাগলা দেহ। পুলিশের অনুমান, তার অন্তত দু’দিন আগে মৃত্যু হয়েছে বছর একত্রিশের ওই যুবকের। এই ঘটনায় হইচই শুরু হয়েছে দেশে। অনেকটা জেসিকা লাল কিংবা আরুষি-হত্যা মামলার মতোই ‘সাপোর্ট সৌরভ জাস্টিস’ হ্যাশট্যাগে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে জনমত গঠন শুরু হয়েছে সৌরভের মৃত্যু-রহস্য উন্মোচনের দাবিতেও। খোদ রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু সৌরভের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে ট্যুইট-বার্তায় বলেছেন, ‘গোটা ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না’।

বিহারের হাজিপুরের আখিলাবাদের বাসিন্দা সৌরভ গত দেড় বছর খড়্গপুর রেল ওয়ার্কশপের চিফ ডিপো মেটেরিয়াল সুপারিন্টেনডেন্ট পদে ছিলেন। গোড়ায় পুলিশের দাবি ছিল, মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়। সেই মতো অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা শুরু হলেও গত শুক্রবার তাতে খুনের ধারা যোগ হয়েছে।

Advertisement

সৌরভের পরিজনদের অসন্তোষ অবশ্য পুলিশি তদন্ত নিয়েই। মৃতের দাদা বিপিনের অভিযোগ, ‘‘প্রথমেই আমরা খুনের অভিযোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ নিতে চায়নি। আসলে তারা সর্পাঘাতে মৃত্যু বলে বিষয়টা চাপা দিতে চেয়েছিল। আসলে, প্রথম থেকেই পুলিশ ঘটনা হাল্কা ভাবে নিয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, “বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হলে ভাই বমি করত বা গ্যাঁজলা বের হত। সে রকম কিছু হয়নি।’’ বিপিনের দাবি, সৌরভের ঘরের দেওয়ালে রক্তের দাগ ছিল। তাঁর মোবাইল পাওয়া যাচ্ছিল না। শরীর বিকৃত হলেও মাথায় আঘাত বোঝা যাচ্ছিল। তার পরেও পুলিশ তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ না করে ঘটনাস্থল পরিষ্কার করে দেয়। পুলিশে আস্থা হারিয়ে ভাইয়ের মৃত্যুর কারণ জানতে তিনি সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন।

সৌরভের বন্ধুরাও একে খুনের ঘটনা বলে দাবি করে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সোশ্যাল নেটিওয়ার্কিং সাইটে। এক জনের প্রশ্ন, ‘এর পরে কি কোনও বাবা-মা তাঁদের ছেলেকে ভারতীয় রেলে চাকরি করতে পাঠাবেন?’ রেল মাফিয়ারাও এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে তাঁদের অনেকের অভিযোগ।

এই সূত্রেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। যদিও পুলিশের দাবি, সব নিয়মমাফিক করা হয়েছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘২৩ সেপ্টেম্বর ভাইয়ের দেহ নিতে এসে খড়্গপুর টাউন থানায় বিপিন কুমার যে অভিযোগ দিয়েছিলেন, তাতে খুন বা কোনও সন্দেহভাজনের কথা বলা হয়নি। পরে কিন্তু আমরাই খুনের মামলা রুজু করেছি।’’ রেল মন্ত্রকে নাড়াচাড়া শুরু হওয়ায় তৎপর হয়েছে পুলিশ। এসআই শ্যামল দাসকে নতুন করে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।

অবিবাহিত সৌরভ কোয়ার্টারে একা থাকতেন। দেহ উদ্ধার হলেও তাঁর মোবাইল মেলেনি কোয়ার্টারে। সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও বিষক্রিয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। বিশদে জানতে ভিসেরা পরীক্ষা করা হচ্ছে। মোবাইলের সন্ধান পেতে জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

বিপিনের প্রশ্ন, ১৯ সেপ্টেম্বর শেষবার ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। পুলিশ কেন এত দিনেও সৌরভের কললিস্ট পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন মনে করল না? পাশাপাশি, ২১ তারিখ অবধি সৌরভের মোবাইল চালু ছিল বলেও তাঁর কিছু বন্ধুর দাবি। ‘‘পুলিশের দাবি মতো, ১৯-২০ তারিখই যদি সৌরভের মৃত্যু হয়, তা হলে ওর মোবাইল চালু থাকল কী ভাবে? অথচ ওর কোয়ার্টারে মোবাইল মেলেনি। এ সব পুলিশ খতিয়ে দেখল না কেন?’’—প্রশ্ন সৌরভের দাদার।

বিপিনের আরও দাবি, ‘‘ভাইয়ের সঙ্গে কয়েক জন ঠিকাদারের অশান্তি হচ্ছিল বলে শুনেছিলাম। ও চাপে ছিল।’’ পুলিশ অবশ্য সৌরভের সহকর্মী ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সূত্র পায়নি বলেই দাবি করেছে। রেলের ওয়ার্কশপে সৌরভের অধস্তন কর্মী নাগরাজু ও বি শ্রীনিবাস রাওকে জেরা করেছে পুলিশ। নাগরাজুর কোয়ার্টারে সৌরভ ভাড়া থাকতেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষও বলেন, “খড়্গপুরে কারখানার স্টোরে কোনও সরঞ্জাম কেনা বা টেন্ডারের বিষয় ডিপো ম্যানেজার দেখেন। সৌরভ ডিপো সুপারভাইজার ছিলেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকার কথা নয়। এ নিয়ে অভিযোগও আসেনি।”

রেল সূত্রের খবর, মাস খানেক আগে বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন সৌরভ। তবে কি সত্যিই চাপে ছিলেন সৌরভ? সঞ্জয়বাবুর জবাব, “সৌরভ বদলির আবেদন করেছিলেন ওঁর বাড়ির কাছাকাছি যেতে। এতে চাপের কোনও প্রশ্নই নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন