এক হাট থেকে আর এক হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গরু। ইলামবাজারে। ছবি: বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।
বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের সঙ্গে বীরভূমের কয়েকটি জায়গার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় এবার তদন্তকারী সংস্থার নজরে এসেছে জেলার পশু হাটগুলি। পাশাপাশি এই জেলার সঙ্গে যুক্ত অন্য জেলার যে সব পশু হাটগুলি রয়েছে, সেগুলির বিষয়েও খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা দফতরও পশু হাটগুলির উপরে নজরদারি চালাচ্ছে। প্রসঙ্গত, বিস্ফোরণ কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল কীর্ণাহারের কাজী মার্কেটের সুকুর শেখের ছেলে আমজাদ ওরফে কাজলের। সোমবার সুকুর শেখ আমজাদকে এনআইএর হাতে তুলে দেয়।
বছর দু’য়েক আগে ইলামবাজারের সুখবাজারে এমন এক পশু হাট এলাকারই একটি টেলিফোন বুথ থেকে আরব দেশ-সহ অন্যান্য জায়গায় লক্ষ লক্ষ টাকার আইএসডি, এসটিডি কল করা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল। রাজ্য গোয়েন্দা দফতরও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করে। পরে অবশ্য সব থিতিয়ে যায়।
ঘটনা হল, জেলার পশু হাটগুলি প্রতি শনিবার বসলেও তার আগের দিন থেকেই কার্যত হাট শুরু হয়ে যায়। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সপ্তাহের নানা দিনে এই হাটগুলি বসে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, হাটের দু’একদিন আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে, এমন কি বাংলাদেশ থেকেও পশু হাটগুলিতে ক্রেতা-বিক্রেতার আসা-যাওয়া রয়েছে। গোয়েন্দারা দেখছে, বাংলাদেশ থেকে কারা নিয়মিত এই হাটগুলিতে আসত।
জেলায় যে পশু হাটগুলি রয়েছে, তার মধ্যে রামপুরহাটের ভাঁড়শালা মোড়ের পশু হাটটি প্রতি বৃহস্পতিবার বসে। এছাড়া সাঁইথিয়ায় ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে শনিবার, নলহাটির গোপালপুর ও রাজনগরে রবিবার পশু হাট বসে। সোমবার লোহাপুরে যে হাটটি বসে, সেটিই জেলার সবচেয়ে বড় পশু হাট। এর ঠিক পরেই রয়েছে সুখবাজারের হাট। সাঁইথিয়া, সুখবাজার ও লোহাপুরের পশুহাটে দশ হাজারের বেশি মানুষের সমাগম হয়। এই প্রতিটি পশু হাট গুলিকে কেন্দ্র করে পশুগুলিকে (গরু) অন্য জায়গায় ‘ডাকিয়া’-রা সড়ক পথে ডাকিয়ে নিয়ে যায়। কিছু পশু নিয়ে যাওয়া হয় যানবাহনের মাধ্যমে গাদাগাদি করেও। বীরভূম লাগোয়া বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার পাঁচুন্দি ও মঙ্গলকোট এলাকার কৈচরেও বসে পশু হাট। এই দুটি হাটের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে জেলার পশু হাটগুলির। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তে নেমে ওই সব পশু হাটগুলিতে নজরদারি চালিয়ে তদন্তকারী সংস্থার সন্দেহ, পশুহাট গুলিকে কেন্দ্র করে গরুর সঙ্গে ডাকিয়াদের মাধ্যমে বিস্ফোরক পাচার হয়ে থাকতে পারে। জেলার পশুহাট গুলিতে এসে গরু কিনে তা মুর্শিদাবাদ ও মালদহ সীমান্ত দিয়ে পাচার করে থাকে যে সব বাংলাদেশি গরু পাচারকারীরা, তাদের জঙ্গিযোগও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা দফতর।
রাজ্য এবং জেলা গোয়েন্দা দফতরের একাধিক আধিকারিক জানিয়েছেন, নানা সূত্রে খবর পাওয়ার পরই, হাটগুলিতে কড়া নজরদারি চলছে। বীরভূম জেলা পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “খাগড়াগড় কাণ্ডের পর জেলার যেখানে যেখানে বাইরে থেকে লোক সমাগম হয়, সেখানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পশুহাটগুলি নিয়েও পুলিশ সতর্ক আছে।”