CPM

‘ইন্ডিয়া’র খেসারত কি বাংলায়, ধন্দ সিপিএমে

আঠাশ মাসের ব্যবধানে ধূপগুড়ি বিধানসভা আসন এ বার বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট কমেছে ১১ হাজার ৩৮৪।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

উত্তরবঙ্গে সাংগঠনিক দুর্বলতা বিস্তর। কিন্তু তার মধ্যেও দলের যা মূল্যায়ন ছিল, ধূপগুড়ির উপনির্বাচনের ফল তার কাছে পৌঁছয়নি। প্রাথমিক পর্যালোচনায় সিপিএমের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ছবি এ রাজ্যে দলের জন্য আখেরে ক্ষতিই ডেকে আনছে? লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্রশ্নের উত্তর হাতড়াতে শুরু করেছে মরিয়া সিপিএম!

Advertisement

আঠাশ মাসের ব্যবধানে ধূপগুড়ি বিধানসভা আসন এ বার বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট কমেছে ১১ হাজার ৩৮৪। আসন জিতলেও তৃণমূলের ভোট ২০২১ সালের তুলনায় দু’হাজার ৭২০ কমেছে। যদিও গত বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে উপনির্বাচনে মোট প্রদত্ত ভোট খানিকটা কম। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম প্রার্থী সেখানে পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭৫৮ ভোট, যা গত বার ছিল ১৩ হাজার ১০৭। এই যৎসামান্য বৃদ্ধিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, এ বার কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী অন্তত ২৩ থেকে ২৫ হাজার ভোট পাবেন বলে সিপিএমের অভ্যন্তরীণ হিসেব ছিল। সেই হিসেব কেন মিলল না, তা নিয়েই শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া।

মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ-সহ শাসক দলের নেতারা বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোট থাকা সত্ত্বেও বাংলায় উপনির্বাচনে ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিতে চেয়েছিল বাম ও কংগ্রেস। সিপিএমের উপরেই উষ্মা দেখিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার দাবি করছেন, বাম-কংগ্রেসের জন্যই তৃণমূলের জিততে সুবিধা হয়েছে! প্রাথমিক পর্যালোচনায় সিপিএম নেতৃত্বের ধারণা, বালিগঞ্জে বিধানসভা উপনির্বাচন থেকে শুরু হয়ে পুরভোট ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের অল্প অল্প করে ভোট-বৃদ্ধির যে ধারা চলছিল, ধূপগুড়িতে এসে তাতে ছেদ পড়ার পিছনে ‘ইন্ডিয়া’ জোট অন্যতম কারণ। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘ধূপগুড়িতে জেতার জায়গায় আমরা কোনও ভাবেই ছিলাম না। কিন্তু আমাদের ভোট যে বাড়ল না, সেটা খুবই উদ্বেগের। বিজেপি ও তৃণমূল, দু’টো শক্তিকেই পছন্দ করেন না, এই একটা অংশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। মনে হচ্ছে, যাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে চান, তাঁরা আমাদের উপরে বিশ্বাস রাখতে চাইছেন না সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল, কংগ্রেস, বামের মিলে থাকার কথা ভেবে। আবার বিজেপিকে যাঁরা হারাতে চান, তাঁদের একটা অংশও আমাদের চেয়ে তৃণমূলের উপরে ভরসা করছেন। এর থেকে বেরোনোর রাস্তা কী ভাবে পাওয়া যাবে, জানি না!’’

Advertisement

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে জলপাইগুড়ির ভারপ্রাপ্ত জিয়াউল আলম, রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মিত্র, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরা ধূপগুড়ির প্রচারে ছিলেন। প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে সাড়াও ছিল ভাল। তার পরেও যা ফল হয়েছে, তার হিসেব মেলাতে পারছে না সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির বৈঠক রয়েছে মঙ্গল ও বুধবার। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা। তবে পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার আগে প্রাথমিক ভাবে সিপিএম নেতাদের মত, ধূপগুড়িকে মহকুমা করার ঘোষণা তৃণমূলকে ভাল ফায়দা দিয়েছে। কিন্তু শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রচারে নানা জায়গায় ভিড় হলেও ভোটে যে তেমন প্রতিফলন হচ্ছে না, প্রকল্পের ‘সুবিধা’র রসায়নে ভোট হয়ে যাচ্ছে, সেই ঘটনাও চিন্তায় রাখছে সিপিএমকে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানা বাধার মধ্যেও ধূপগুড়িতে সিপিএম যা সংখ্যালঘু ভোট পেয়েছিল, উপনির্বাচনে তা-ও কমে গিয়েছে। ফায়দা পেয়েছে তৃণমূল। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের জন্যই এই খেসারত কি না, প্রশ্ন উঠছে দলে। এমতাবস্থায় সুজন বলেছেন, ‘‘পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা হবে। তবে দেশে বিজেপিকে হারাতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট হয়েছে। আর এখানে বিজেপিকে নিয়ে এসে জায়গা করে দিয়েছে তৃণমূলই। দু’টো শক্তির বিরুদ্ধেই তাই লড়তে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন