ভারতী ঘোষ।—ফাইল চিত্র।
প্রশাসন বলছে, রুটিন বদলি। কিন্তু, রাজনৈতিক শিবিরগুলির পাশাপাশি প্রশাসনের অন্দরে ভারতী ঘোষের বদলি নিয়ে নানা জল্পনা ভেসে বেড়াচ্ছে।
সোমবারই ভারতীকে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পদ থেকে ব্যারাকপুরে অপেক্ষাকৃত ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসারের পদে বদলি করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গেই বদলি হয়েছেন রাজ্যের আরও চার আইপিএস অফিসার। কিন্তু, তাঁদের সকলকে বাদ দিয়ে ভারতীর বদলি নিয়েই আলোচনা তুঙ্গে।
কারণ, তিনি তৃণমূল নেত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে দীর্ঘ দিন ধরেই পরিচিত। এমনকী, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাটা ‘ব-কলমে’ তিনিই চালাতেন বলে বিরোধীরা বার বার অভিযোগ করে এসেছেন। জেলা তৃণমূলের অন্দরেও ভারতীকে নিয়ে এই অভিযোগের পাশাপাশি নানা ক্ষোভও ছিল। এমনকী, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের সময় দু’বার জেলার দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয় ভারতীকে। কিন্তু, ভোট মিটতেই সেই তিনিই ফের পুরনো দায়িত্বে ফিরে এসেছেন। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ভারতীকে এমন ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ পদে হঠাৎ বদলি করা হল কেন?
আরও পড়ুন
বুথে এত বিজেপি,সন্দেহ তৃণমূলেই
নানা জন নানা ‘তত্ত্ব’ পেশ করছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের এক নেতার মতে, মুকুল রায় তথা বিজেপি-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই ভারতী-বদলির অন্যতম কারণ। সবং উপ-নির্বাচনে তিনি বিজেপিকে নানা ভাবে সাহায্য করছেন। আর গোটাটই তৃণমূল নেত্রীর কানে গিয়েছে। তার পরেই নবান্নের এই সিদ্ধান্ত। ওই নেতার কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যে ভারতীর সম্পর্ক অবনতির পথে যাচ্ছিল তা প্রথম টের পাওয়া যায় এ মাসের গোড়ায়।
কী ভাবে? ২০১৪ সালে প্রথম বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া জেলা মিলিয়ে জঙ্গলমহল কাপের সূচনা হয়। এই কাপের পরিকল্পনা করেছিলেন ভারতী। সেই পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রীর ভাল লাগে। প্রতি বছর পশ্চিম মেদিনীপুরেই ওই ‘টুর্নামেন্ট’ হত। মঞ্চে প্রতি বারই ভারতীকে সঞ্চালক হিসাবে দেখা যেত। কিন্তু, এ মাসের গোড়ায় হওয়া সেই জঙ্গলমহল কাপ সরিয়ে বাঁকুড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকলেও ভারতী কিন্তু বাঁকুড়ায় যাননি। এর পর থেকেই প্রশাসনের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়, তবে কি ভারতীর সঙ্গে মমতার সম্পর্ক তলানিতে?
আরও পড়ুন
মমতার আস্থাভাজন ভারতীকে কেন সরানো হল? জল্পনা তুঙ্গে
২০১৪-র লোকসভা এবং ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভারতী ঘোষকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয়। কিন্তু, সম্প্রতি হওয়া সবং বিধানসভার উপ-নির্বাচনের সময়ে ভারতী-ই পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি ছিলেন। আগের দু’বারের মতো বিজেপি তাঁর নামে কোনও অভিযোগ করেনি কমিশনের কাছে। এমনকী তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তিনি গোপনে বিজেপি তথা মুকুল রায়কে নির্বাচনে সাহায্য করেছেন। ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, বিজেপি প্রায় ১৫ শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে ওই কেন্দ্রে। তাতে ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠ’ তত্ত্বের আগুনে ঘি পড়ে। পাশাপাশি, ভোটের দিন সিআরপিএফ বাহিনী একটি বুথের সামনে সিপিএম-তৃণমূলের গণ্ডগোল থামাতে নাকি সাত রাউন্ড গুলি চালায়। তার ছ’রাউন্ডই মাটিতে করা হয়েছিল। এক রাউন্ড শূন্যে। এই ঘটনাকেও তৃণমূল ভাল চোখে দেখেনি।
আরও পড়ুন
দারুণ লড়াই, তৃতীয় হয়েও আনন্দ মোদীর
এর সঙ্গেই জুড়ে যায় দলীয় নেতাদের ‘উপেক্ষা’ করে ভারতীর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ‘চালানো’র তত্ত্ব। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, দলের তরফে এ নিয়ে বার বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। তা হলে কি তিনি এ বার সেই অভিযোগ গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করেছেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি অন্তত তেমনই।
এই ধরনের খবর আপনার ইনবক্সে সরাসরি পেতে এখানে ক্লিক করুন
বিরোধী শিবিরের একটা অংশ আবার ভারতীর এই বদলির পিছনে রাজ্যের এক মন্ত্রীর ‘হাত’ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন। তাঁদের মতে, ভারতী যখন থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দায়িত্বে, তখন থেকেই জঙ্গলমহলে সেই মন্ত্রীর যাতায়াত কমতে শুরু করে। একটা সময় তিনি জঙ্গলমহলে যাওয়া ছেড়েও দেন। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে সেই সময়ে। কিন্তু, সম্প্রতি সেই মন্ত্রী ফের মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ফিরে এসেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আর সে কারণেই নাকি ভারতীকে বদলি হতে হয়েছে।