লড়াই কি তবে শীর্ষতলার?

মাথার উপরে ছাতার মতো থাকা পিতৃদেব মান্নান হোসেনকে হারিয়েছেন, আর মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। মুকুল রায়ের দলবদলের পরে দলে শুভেন্দুর গুরুত্ব ক্রমেই বেড়েছে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০৪:৪২
Share:

তৃণমূলের অন্দরে একটা কথা অনেক দিন ধরেই নিঃশব্দে ঘোরাফেরা করছে— মুর্শিদাবাদে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র প্রতিনিধি সৌমিক হোসেন। তাঁর সুপারিশেই বিধানসভায় টিকিট এবং পুরপ্রধানের পদ পেয়েছিলেন সৌমিক। তবে রাজ্য রাজনীতিতে নিশ্চুপে তার পরেই একের পর এক ঘটেছে পালাবদল।

Advertisement

মাথার উপরে ছাতার মতো থাকা পিতৃদেব মান্নান হোসেনকে হারিয়েছেন, আর মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। মুকুল রায়ের দলবদলের পরে দলে শুভেন্দুর গুরুত্ব ক্রমেই বেড়েছে। আর তাতেই চাপ বেড়েছে সৌমিকের। দলের অন্দরের খবর, কৌশলে শুভেন্দুর তৈরি করা জমিতেই পা পিছলে গেল সৌমিকের।

তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, তাঁর পতনের আরও কিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম, দলের কর্মী-কাউন্সিলরদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার। তবে সে সব বাহ্যিক কারণে সৌমিককে সরে যেতে হল, এমনটা মনে করছেন না জেলা তৃণমূলের নেতারা। জেলা তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘আদতে লড়াই সৌমিক বনাম শুভেন্দুর নয়, লড়াইটা অনেক উপরের। মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষকের।’’ তাঁর দাবি, জেলায় অভিষেকের এক মাত্র ‘হাত কেটে’ দিতে পারলেই জেলায় তাঁর আর যে কোনও অস্তিত্ব থাকবে না, এটা অনুমান করেই সৌমিক বধের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

Advertisement

ডোমকলের এক তাবড় বাম নেতাও মনে করেন, ‘‘ডোমকল থেকে সৌমিক হোসেনকে উৎখাত করতে পারলেই জেলা থেকে অভিষেকের শেকড়টা তুলে ফেলা যাবে। আর সেই কাজটাই খুব ধীরে ধীরে কৌশলে করেছেন শুভেন্দু।’’

রাজনৈতিক মহলের দাবি, স্থানীয় কিছু কাউন্সিলর এবং তৃণমূল নেতার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেছিলেন শুভেন্দু। তাঁদের মাধ্যমেই ধীরে ধীরে সৌমিকের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী মজবুত হতে থাকে। একটা সময় ডোমকলের গোধনপাড়ার জনসভায় বলতে উঠলে সৌমিককে নামিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়। স্লোগান ওঠে মাঠ জুড়ে। তৃণমূলের এক নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘ওই ঘটনায় প্রচ্ছন্ন মদত ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। কারণ সেই সভা করতে এসে সৌমিকের অপমান নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করেননি তিনি। অথচ তিনি মঞ্চেই বসেছিলেন।’’ ডোমকল মহকুমা এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে মিছিল, স্লোগান এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও আক্রমণ শুরু হয়। কেবল সাধারণ মানুষ বা নিজের দলের মধ্যে নয়, জেলা পুলিশের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়তে থাকে সৌমিকের।

সঙ্গে ছিল সৌমিকের আচরণগত ত্রুটি। স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, ‘‘পায়ের তলার মাটি শক্ত হওয়ার আগেই এমন হম্বিতম্বি শুরু করলেন সৌমিক যে পা পিছলে গেল। যদিও সৌমিকের দাবি, ‘‘পা পিছলোয়নি। আমি নিজে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি জানিয়েছেন এ সবের মধ্যে তিনি নেই। ফলে এই অনাস্থায় আমার কিছু যায় আসে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন