ঘাটতি পড়ুয়ার, নাকি শিক্ষক ও পাঠ্যক্রমেরই?

এখন কোনও রকম ঘাটতি হয়ে থাকলে সেটা কার— শিক্ষকের? পড়ুয়ার? নাকি পাঠ্যক্রম প্রণেতাদের?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলা মাধ্যম থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজিতে ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে এক ছাত্রী বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর অনার্স কাটা গিয়েছিল। ক্লাসে ইংরেজি বুঝতে অসুবিধা হওয়ায় অবসাদে ভুগে বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়ার আত্মহত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি। এ বার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রভোটে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজিতে পড়াশোনা করতে অসুবিধার বিষয়টিও ছিল। বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের ইংরেজির ভিত পোক্ত করতে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নতুন ইংরেজি ব্যাকরণ বই দিচ্ছে।

Advertisement

তা হলে কি বাংলা স্কুলে এই প্রজন্মের পড়ুয়াদের ইংরেজি শিক্ষায় কোথাও কোনও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে? অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, আগে বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের ইংরেজির উপরে যে-দখল ছিল, এখনকার বাংলা মাধ্যমের অনেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, কেন পাওয়া যাচ্ছে না? কেন ইংরেজির নতুন ব্যাকরণ বই প্রকাশের কথা ভাবতে হল? আগে তো ‘রেন অ্যান্ড মার্টিন’ বা নেসফিল্ডের গ্রামার বই পড়েই ছাত্রছাত্রীরা ভাল ইংরেজি লিখতেন। বাংলা মাধ্যম তাঁদের ভাল ইংরেজি শেখা বা লেখার ক্ষেত্রে কোনও রকম বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এখন কোনও রকম ঘাটতি হয়ে থাকলে সেটা কার— শিক্ষকের? পড়ুয়ার? নাকি পাঠ্যক্রম প্রণেতাদের?

হাওড়া জেলা স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় মনে করেন, এখনও বাংলা মাধ্যম থেকে ইংরেজি জানা ভাল পড়ুয়া বেরোচ্ছে এবং তারা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে সফলও হচ্ছে। কিন্তু ফাঁক থাকছে পাঠ্যক্রমে। অমিতাভবাবু পঁচিশ বছর ধরে ইংরেজি পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, “আগেকার দিনে ইংরেজির পাঠ্যক্রমে টেক্সট বইয়ে যে-সব গদ্য বা পদ্য থাকত, তার ‘লিটারারি ভ্যালু’ বা সাহিত্যমূল্য ছিল। এখনকার টেক্সট বইয়ের বিভিন্ন রচনার সাহিত্যমূল্য কম। আকর্ষক গদ্য-পদ্যের জন্য পড়ুয়ারা আগে আরও বেশি ইংরেজি পড়তে উৎসাহিত হত। কিন্তু এখন ইংরেজি ভাষার প্রতি ভালবাসাই তৈরি হচ্ছে না অনেক ছাত্রছাত্রীর।”

Advertisement

আরও পড়ুন: বর্ষবরণের রাতে দত্তপুকুরে বাড়ি ঢুকে ‘গণধর্ষণ’

আশির দশকে বাংলা মাধ্যমের স্কুলে ইংরেজি পাঠ্যক্রমে বিপুল পরিবর্তন আসে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ইংরেজি (‘লার্নিং ইংলিশ’) চালু হয়। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা ইংরেজি শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত মনে করেন লার্নিং ইংলিশে যে-পাঠ্যক্রম রয়েছে, তাতে পড়ুয়ারা নম্বর বেশি পাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাতে ইংরেজির ভিত শক্ত হচ্ছে না। শুভ্রজিৎবাবু বলেন, “ইংরেজিতে শুদ্ধ বাক্য না-লিখেও পাশ করে যাচ্ছে পড়ুয়ারা।” ওই শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ, লার্নিং ইংলিশে ইংরেজি শুনে পড়ুয়াদের বোঝার ক্ষমতা অনেকটা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু যা শুনছে, সেটা নিজের ভাষায় লেখা বা বলার ক্ষমতা ততটা তৈরি হচ্ছে না। তা ছাড়া এখন স্কুলগুলিতে সার্বিক ভাবে শিক্ষকের সংখ্যা কম। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, নিচু ক্লাসে ইতিহাসের শিক্ষক ইংরেজি পড়াচ্ছেন!

পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ থেকে শুরু করে হেয়ার স্কুল, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলে ইংরেজি পড়িয়েছেন শিবশঙ্কর রায়। অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক বলেন, “১৯৬৮ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজির পরীক্ষা হত ২০০ নম্বরের। কোনও টেক্সট বই থেকে প্রশ্ন আসত না। ১৯৬৮ সালের পরে ১০০ নম্বর ছিল টেক্সট বইয়ের প্রশ্নে, বাকি ১০০ নম্বরের প্রশ্ন আসত টেক্সট বইয়ের বাইরে থেকে।” তাঁর অভিজ্ঞতা, টেক্সট বইয়ের বাইরে ইংরেজিতে প্রবন্ধ থেকে শুরু করে অনেক কিছু লিখতে হত, যা ইংরেজির ভিত আরও বেশি শক্ত করে দিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন