আনন্দাশ্রু: মা স্বাতী আগরওয়ালের সঙ্গে দেবাং। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
পরীক্ষা খুব ভালই হয়েছিল। তা বলে একশোয় একশো! মানে চারশোয় চারশো! বিস্ময় গোপন করছেন না আইএসসি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে যুগ্ম প্রথম দেবাংকুমার আগরওয়াল। মঙ্গলবার ফল ঘোষণার পরে লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজের ছাত্র দেবাং বললেন, ‘‘খুব ভাল পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবতেই পারছি না, কী ভাবে মূল চার বিষয়েই একশো শতাংশ নম্বর পেয়ে গেলাম। ফল ভালই হবে, জানতাম। তবে এভারেস্টের শিখরে যে পৌঁছে যাব, সেটা ভাবতে পারিনি।’’
অঙ্কে একটি নম্বর কাটা গিয়েছে। দেবাং পেয়েছেন ৯৯। তবে ‘বেস্ট অব ফোর’ বা অন্য চারটি বিষয়ে একশোয় একশো পেয়েছেন তিনি। আর চারটি বিষয়ে পুরো নম্বর পাওয়ায় যোগফলে তাঁর প্রাপ্তির হার ১০০%।
বিশ্বাস করতে পারছেন না দেবাংয়ের মা-বাবাও। মা স্বাতী আগরওয়াল গৃহবধূ। রুমাল দিয়ে আনন্দাশ্রু মুছে স্বাতীদেবী বললেন, ‘‘প্রথমে ওয়েবসাইট দেখে ছেলের নম্বর জানতে পারি। পরে স্কুল থেকে ফোন করে জানায়, ও প্রথম হয়েছে। ও ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার ব্যাপারে খুব মনোযোগী। তবে একশো শতাংশ নম্বর যে পাবে, সেটা আমরা কেউই ভাবতে পারিনি।’’
ছেলের প্রথম হওয়ার খবর পেয়ে অফিস থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরেছেন দেবাংয়ের বাবা মণীশ আগরওয়াল। পেশায় ব্যবসায়ী মণীশবাবু বলেন, ‘‘আজ দেবাংয়ের মায়ের সব থেকে আনন্দের দিন। আমি তো কাজের জন্য অনেক সময়েই ছেলের পড়াশোনা সে-ভাবে দেখার সময় পেতাম না। পড়াশোনা থেকে সব ক্ষেত্রে ওর মা ওকে সব সময় আগলে রাখেন। সেই জন্যই তো ছেলের এই সাফল্যে মা আনন্দে কেঁদে ফেলেছেন।’’
ফল বেরোনোর পর থেকেই বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, সংবাদমাধ্যমের লোকজনের ভিড়। বসার ঘরে বসে দেবাং বললেন, ‘‘কোনও সাজেশন করে পড়িনি। পুরো সিলেবাসই খুঁটিয়ে পড়েছি।
পরীক্ষার ঠিক আগে বেশি করে না-পড়ে সারা বছর মন দিয়ে পড়াশোনা করেছি। কত নম্বর পাব, এই নিয়ে কোনও টেনশন করিনি কখনও।’’ দেবাং জানান, রাত জেগে পড়া নয়। ভোরে উঠে পড়তেই তাঁর বেশি ভাল লাগে। ইংরেজি, হিন্দি ও অঙ্কের জন্য গৃহশিক্ষক ছিলেন। বাকি সব বিষয় স্কুলের শিক্ষক এবং বাড়িতে মা-বাবার কাছেই পড়েছেন। ‘‘মা-বাবা আর গৃহশিক্ষক তো বটেই, স্কুলের শিক্ষকেরাও খুব সাহায্য করেছেন পড়াশোনায়,’’ বললেন দেবাং।
‘‘ভাল ফল করতে হলে পুরো বিষয় খুঁটিয়ে পড়তে হবে। কঠোর পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই,’’ পড়ুয়াদের উদ্দেশে পরামর্শ দ্বাদশে প্রথম স্থানাধিকারীর।
ছাত্রের মহাসাফল্যে মিষ্টি নিয়ে বাড়িতে ছুটে এসেছেন দেবাংয়ের অন্যতম গৃহশিক্ষক রাজেনকুমার আগরওয়াল। ছাত্রকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে রাজেনবাবু বলেন, ‘‘ওকে কখনও কোনও বিষয়ে শর্ট কাট করতে দেখিনি। কোনও ভুল করলে কেন ভুল হল, সেটা নিয়ে খুব ভাবত। এবং সেই ভুল দ্বিতীয় বার করত না।’’
‘হবি’ বা শখ কী? গল্পের বই পড়তে ভালবাসেন দেবাং। সায়েন্স ফিকশন তাঁর প্রিয়। ‘‘পড়তে পড়তে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। একটু গল্পের বই পড়ে নিলাম। একটু হয়তো সিনেমা দেখে নিলাম। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাকাউন্ট আছে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প হয়। সাঁতার কাটি মাঝেমধ্যে,’’ বললেন দেবাং।
কম্পিউটার সায়েন্স পড়তে চান দেবাং। তবে কোথায় পড়বেন, এই শহরেই থাকবেন, নাকি বাইরে যাবেন— সেই বিষয়ে এখনও বিশেষ ভাবনাচিন্তা করেননি তিনি।
দাদার সাফল্যে খুব খুশি দেবাংয়ের বোন মেধা। পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। স্বাতীদেবী বললেন, ‘‘দাদার সঙ্গে খুব ভাব। খুনসুটিও লেগেই থাকে। দাদার প্রথম হওয়ার খবর শুনে ও দারুণ খুশি!’’ ‘‘আমিও বড় হয়ে দাদার মতো ফার্স্ট হতে চাই। একশোয় একশো পেতে চাই,’’ সঙ্কল্প মেধার।