কথায় কথায় হাসপাতাল তৈরি আপাতত আর নয়। বরং সরকার যে তৈরি হয়ে যাওয়া হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নেই মন দিতে চায়, মঙ্গলবার ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, ডাক্তার ও নার্সের ঘাটতিই হুটহাট হাসপাতাল গড়ার অন্যতম বাধা।
বৈঠকে বিভিন্ন পুরসভার তরফে তাঁর কাছে হাসপাতালের আবেদন জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেককেই পরিষ্কার জানিয়ে দেন, প্রতিটি পাড়ায় বা ব্লকে ব্লকে হাসপাতাল গড়া অবাস্তব ব্যাপার। এত চিকিৎসক বা নার্স পাওয়া অসম্ভব। বলেছেন, ‘‘ডাক্তার কি আকাশ থেকে পড়ে? নাকি স্বর্গ থেকে নেমে আসে?’’ উত্তর ২৪ পরগনায় যে-সব মেডিক্যাল কলেজ, জেলা বা মহকুমা হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলিতেই মানুষকে পরিষেবা নেওয়ার কথা বলেন তিনি। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন জেলার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এবং কল্যাণীতে প্রস্তাবিত ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ (এইমস)-এর কথা। ২০-৩০ কিলোমিটার দূর থেকে এই সব হাসপাতালে পরিষেবা নিতে আসতে খুব অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় সব চেয়ে বেশি স্বস্তি পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কারণ, রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত ৪২টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
এ দিনের বৈঠকে গোবরডাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ দত্ত প্রশ্ন তোলেন, তাঁর এলাকায় একটি হাসপাতাল গড়ার কথা ছিল। তিনি এলাকার বাসিন্দাদের কী বলবেন? মুখ্যমন্ত্রীর তৎক্ষণাৎ জবাব, ‘‘বলে দেবেন যে, হবে না।’’ না-হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি, ‘‘না-চাইতেই অনেক পেয়েছেন। এত চাইতে নেই। ডাক্তার বাজারে জামাকাপড়ের মতো মেলে না। অনেক কষ্টে ১২ হাজার ডাক্তার জোগাড় করেছি। একটা নার্স তৈরি করতে তিন বছর লাগে।’’ তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কল্যাণীতে এইমস হচ্ছে। ওখানে আসবেন। কত দূর? ৩০ কিলোমিটার। ১৪০০ কিলোমিটার উজিয়ে দিল্লি যাওয়ার থেকে তো সহজ হবে। এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন।’’
সরকার যে হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়নের বিষয়টিকেই এখন বেশি গুরুত্ব দেবে, তা বুঝিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বারাসত হাসপাতাল, মাতৃসদন, বরাহনগর হাসপাতাল, নাগেরবাজারের কয়েকটা হাসপাতাল নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে লাগাতার কড়া নজর রাখার জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রলয় আচার্যকে নির্দেশ দেন তিনি। অসন্তোষ প্রকাশ করেন লাটবাগান পুলিশ হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে। পরে বলতে উঠে বারাসতের বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী এলাকার হাসপাতালগুলিতে পার্থেনিয়ামের জঙ্গল, মশার উৎপাতের কথা তোলেন। এর সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।