চা-বাগানে সঙ্কট কাটতে অন্তত তিন বছর

বাগান বন্ধের জেরে এ বার দার্জিলিঙের ৮৭টি বাগানের ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ চায়ের ব্যবসা প্রায় পুরোটাই মার খাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে অন্তত ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছিল দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন (ডিটিএ)

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০৪:২৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

পাহাড়ে অশান্তির জেরে এ বছরে দার্জিলিং চা উৎপাদনের আশা কার্যত শিকেয়। শুধু তা-ই নয়, শিল্পমহলের আশঙ্কা, এর পরে বন্‌ধ উঠলেও চা বাগানে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরতে গড়িয়ে যাবে অন্তত তিন বছর।

Advertisement

দার্জিলিঙে টানা বন্‌ধের জেরে চা-বাগান বন্ধ গত ৯ জুন থেকে। বন্‌ধ তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের নেতাদের একাধিক বার অনুরোধ করেছে পর্যটন এবং চা শিল্প মহল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। আন্দোলনকারীদের পরবর্তী সর্বদল বৈঠক ১ অগস্ট। আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে সবাই। যদিও সেই বৈঠকে যা-ই সিদ্ধান্ত হোক না কেন, এ মরসুমে বাগানগুলিতে উৎপাদনের আর কোনও আশা দেখছে না চা শিল্পমহল। তাদের বক্তব্য, যদি বন্‌ধ ওঠে ত হলেও বাগান খোলার পরে চা গাছের পরিচর্যা করে সেগুলিকে উৎপাদনের উপযুক্ত করতেই মরসুম শেষ হয়ে যাবে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে লাগবে বছর তিনেক।

বাগান বন্ধের জেরে এ বার দার্জিলিঙের ৮৭টি বাগানের ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ চায়ের ব্যবসা প্রায় পুরোটাই মার খাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে অন্তত ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছিল দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন (ডিটিএ)। তখনও তাদের আশা ছিল, বন‌্ধ উঠবে এবং সে ক্ষেত্রে অন্তত বর্ষা বা শরতে কিছু চা তৈরি হবে। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে মোর্চা ও তার সহযোগী দলগুলি।

Advertisement

ডিটিএ-র সেক্রেটারি জেনারেল কৌশিক বসু বুধবার জানান, এত দিন বন্ধ থাকার ফলে বাগানগুলি আগাছায় ভরে গিয়েছে। পাতাও এত লম্বা হয়ে গিয়েছে যে, সেগুলি না-ছেঁটে ফেলা পর্যন্ত চা তৈরির উপযুক্ত পাতা গজাবে না। তিনি বলেন, ‘‘এ সবের জন্য অন্তত দু’আড়াই মাস সময় লাগবেই। আবার পুজোর ছুটির জন্য বাগান বন্ধ থাকার কথা। বন‌্ধ যদি ওঠেও, বাগান তৈরি হতেই তো মরসুম প্রায় শেষ! তা হলে সেখানে কী করে আর চা তৈরি হবে? আর বাজারে গত বছরের পুরনো চা খুব একটা পড়ে থাকার কথা নয়।’’ বিভিন্ন বাগানে সব গাছ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে এক থেকে তিন বছর সময় লাগবে বলেও তাঁর দাবি।

আরও পড়ুন: শালবনির জমি ফেরাতে চায় জিন্দল

নিলামেও দার্জিলিং চায়ের ভাঁড়ার প্রায় শেষ। জোগান কম থাকায় বাড়ছে চায়ের দামও। এ দিন কলকাতা নিলাম কেন্দ্রের ২৯ নম্বর নিলামে ১৭,৫০১ কেজি চা বিক্রি হয়। কেজি প্রতি চায়ের গড় দাম ছিল ৬৯০.৭৩ টাকা। গত বছর একই নিলামের গড় দাম ছিল ৪১১ টাকা। ফলে খোলা বাজারেও চায়ের দাম বাড়ার সম্ভাবনা।

পাহাড়ের অশান্তির জেরে চা শিল্পের সমস্যা জানিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব ও রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন টি বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যান সন্তোষ যড়ঙ্গী। ষড়ঙ্গীর সঙ্গে বৈঠকে ইতিমধ্যেই আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন ডিটিএ কর্তারা। সে ক্ষেত্রেও জাঁতাকলে চা শিল্পমহল। কারণ বোর্ড ক্ষতির নির্দিষ্ট হিসেব চায়। কিন্তু কবে ঝামেলা মিটবে, তা নিয়ে বাগানগুলি অন্ধকারে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ কত হবে, তা এখনই আন্দাজ করতে পারছে না তারা।

যড়ঙ্গী এ দিন বলেন, ‘‘নগদ জোগানে সমস্যার জন্য ওঁরা নয়া ঋণের ক্ষেত্রে সুদে ছাড়-সহ বিভিন্ন আর্থিক সাহায্যের দাবি তুলেছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে সেই প্রস্তাব দিতে হলে তার নির্দিষ্ট হিসেব জরুরি। ওঁদের বলেছি সেই হিসেব তৈরি করতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন