বেলডাঙাতেই স্থায়ী ঘাঁটি বানাতে চেয়েছিল জামাত

করিমপুরের বরবকপুর, বেলডাঙা, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী, কীর্ণাহার কিংবা খাগড়াগড়ে ভাড়া বাড়িতে সংগঠন চালালেও, এ রাজ্যে স্থায়ী আস্তানার প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে এ দেশে ঢুকে পড়া জামাত উল মুজাহিদিনের নেতারা। সিআইডি সূত্রের দাবি, বর্ধমান-কাণ্ডে মৃত জামাত নেতা শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া ওরফে গুলসানা বিবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪৮
Share:

করিমপুরের বরবকপুর, বেলডাঙা, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী, কীর্ণাহার কিংবা খাগড়াগড়ে ভাড়া বাড়িতে সংগঠন চালালেও, এ রাজ্যে স্থায়ী আস্তানার প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে এ দেশে ঢুকে পড়া জামাত উল মুজাহিদিনের নেতারা। সিআইডি সূত্রের দাবি, বর্ধমান-কাণ্ডে মৃত জামাত নেতা শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া ওরফে গুলসানা বিবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সিআইডি সূত্রের খবর, বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ে কাঠা দুয়েক জমিও বাছা হয়েছিল। বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়কে কেন্দ্র করেই বর্ধমান থেকে বাংলাদেশে বিস্ফোরক ও বোমা পাচার করা হত বলে ইতিমধ্যেই তদন্তে জেনেছে সিআইডি।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, জুন মাসের শেষে খাগড়াগড়ে গেলেও সেখানে শাকিল-রাজিয়াদের স্থায়ী ভাবে থাকার পরিকল্পনা ছিল না। তারা বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ে পাকাপাকি ভাবে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অক্টোবরের শেষেই বেলডাঙায় বড়ুয়া মোড়ের জমিটি রেজিষ্ট্রি হওয়ার কথা ছিল। সেই জমিতে বাড়ি বানিয়ে শাকিল-রাজিয়া তাদের তিন সন্তান নিয়ে চলে যাবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। সে ক্ষেত্রে বড়ুয়া মোড়ই হত বাংলাদেশের জামাতের এ পারের স্থায়ী ঠিকানা। ওই জমি কেনার জন্যই টাকা জোগাড় করেছিল শাকিল- রাজিয়া। রাজিয়ার কাছ থেকে যে ৪৪ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে, তা জমি রেজিস্ট্রির জন্য খরচ করা হত বলে রাজিয়া তাঁদের জানিয়েছে, সিআইডি-র তদন্তকারীদের দাবি।

সিআইডি-র সূত্রের খবর, এর মধ্যে ৩০ হাজার টাকা রাজিয়া তার বাবা আজিজুল হোসেন গাজির কাছে অগস্ট মাসে নিয়ে এসেছিল। বাকি ১৪ হাজার টাকা রাজিয়া পেয়েছিল কওসরের কাছে ১০-১২টি সকেট বোমা বেচে। কওসর ৩০ সেপ্টেম্বর বোমাগুলি নিয়ে গিয়েছিল। পরদিন ১ অক্টোবর সপ্তমীর দিন সেই বাবদ কওসর ১৪ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিল রাজিয়ার হাতে। সিআইডি জেনেছে, ২ অক্টোবর আরও ৫ ডজন সকেট বোমা কওসরের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকেও ৭০-৭৫ হাজার টাকা পাওয়া যেত। সেই টাকা দিয়েই জমি রেজিষ্ট্রি করা হত।

Advertisement

সিআইডি জেনেছে, দু’কাঠা জমির দাম বাবদ ইতিমধ্যেই দেড় লক্ষ টাকা শাকিল-রাজিয়া জমির মালিককে দিয়েছিল। সে সংক্রান্ত কাগজপত্রও তাঁরা হাতে পেয়েছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। সেই টাকা কোথা থেকে এল? বেলডাঙার ঘাঁটি থেকে রাজশাহী-সাতক্ষীরায় আগে যে বোমা পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকেই এই টাকা জোগাড় হয়েছিল বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।

শাকিল-রাজিয়ার তরফে বড়ুয়া মোড়ের এই জমি কেনা সংক্রান্ত বিষয়গুলি কালাম নামে এক জন দেখভাল করত বলে জেনেছে সিআইডি। সিআইডি সূত্রের খবর, শাকিল আহমেদের তিনটি মোবাইল ফোনও থাকত কালামের কাছে। শাকিল যখন খাগড়াগড়ে নতুন ‘ইউনিট’ নিয়ে ব্যস্ত তখন আব্দুল কালাম বড়ুয়া মোড়ের অফিস এবং কারবার চালানোর দায়িত্ব তুলে নেয় বলে সিআইডি জানতে পারে। শাকিলরা বড়ুয়া মোড়ের স্থায়ী দফতরে চলে গেলে বর্ধমানের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হত বিস্ফোরণে আহত আব্দুল হাকিমের উপর।

তাকে সাহায্য করত বোলপুরের বাসিন্দা হাবিবুর। বোলপুরের আরতি সিনেমার কাছে একটি পোশাকের দোকানের মালিক হাবিবুর মাস দুয়েক আগে বর্ধমানের বাবুরবাগে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেও শুরু করেছিল। সেখানেই তার সঙ্গে কওসর ও তার স্ত্রী জিন্নাতুর থাকত।

সিআইডি জানাচ্ছে, বেলডাঙা থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত খুব কাছে। তা ছাড়া, বাংলাদেশ থেকে আসা জামাত নেতারা আস্তানা গেড়েছিলেন বেলডাঙা-লালগোলা-রঘুনাথগঞ্জের আশপাশে। বেলডাঙার আস্তানা থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সহজ হত। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নেমেছিল শাকিল-রাজিয়ারা। কিন্তু খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে সব হিসেবই আপাতত ওলটপালট হয়ে গিয়েছে।

সেই সূত্রে তাদের আগাম পরিকল্পনার প্রসঙ্গে কিছুটা জানা গেলেও জামাত উল মুজাহিদিন নেতারা গ্রেফতার না হওয়ায় এ রাজ্যে সক্রিয় জামাত-নেটওয়ার্ক এখনও অনেকটাই অজানা বলে মনে করছে সিআইডি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন