মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে ফাঁকা ব্যাঙ্ক। — নিজস্ব চিত্র
তখনও তিনি রাষ্ট্রপতি হননি।
জীবনে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে জিতে ফের অর্থমন্ত্রী। সালটা ২০০৯, কেন্দ্র মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর। যেখানে পরের তিন বছরে একের পর এক ব্যাঙ্ক এবং এটিএম খোলা হবে।
সৌজন্যে, প্রণব মুখোপাধ্যায়।
যাঁর ব্যাঙ্ক-এটিএম খোলার হিড়িক দেখে সে সময় প্রচুর টিটকিরি দিয়েছে বিরোধীরা। পিছনে কেউ ‘ব্যাঙ্কমন্ত্রী’ বলে ডেকেছে তো কেউ বাঁকা হেসে বলেছে, ‘একেই বলে উন্নয়ন!’
আপাতত সে সব উধাও। বরং জঙ্গিপুর আর রঘুনাথগঞ্জে আমজনতা হাসছে। সারা দেশে যখন নগদ টাকার জন্য হাহাকার, ব্যাঙ্কে-এটিএমে ভোর থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইন, এ তল্লাটে উল্টো ছবি। ব্যাঙ্কে উপচে পড়া ভিড় নেই, এটিএমের সামনেও হাতে গোনা কয়েক জন। আ়শপাশের এলাকা থেকেও লোকে এসে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচনী কেন্দ্রটির নাম জঙ্গিপুর হলেও তার সদর শহর রঘুনাথগঞ্জ। ২০০৯-এ প্রণববাবু যখন কংগ্রেসের টিকিটে জিতে অর্থমন্ত্রী হলেন, শহরে ব্যাঙ্ক ছিল মাত্র দু’টি। সেখান থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫টিতে, এটিএম ২০টি। রঘুনাথগঞ্জ শহর ছাড়িয়ে এক কিলোমিটার পরিধির মধ্যে আরও পাঁচটি ব্যাঙ্ক রয়েছে। মাত্র ৩৩ হাজার মানুষের শহরে সংখ্যাটা যথেষ্ট বেশি।
এক ব্যাঙ্ককর্তার ব্যাখ্যা, রাজ্যে বর্তমানে গড়ে ১০ হাজার জন প্রতি একটি ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। সেখানে রঘুনাথগঞ্জে প্রতি হাজার দুয়েক লোকের জন্য রয়েছে একটি করে ব্যাঙ্ক। ফলে ফারাক চোখে পড়তে বাধ্য। প্রথম দিকে কিছুটা অসুবিধা হলেও টাকার জোগান আসতেই ভিড় পাতলা। অন্য এলাকা থেকে লোকে টাকা তুলতে আসা সত্ত্বেও সমস্যা হচ্ছে না।
শনিবারই বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা চর পিরোজপুর থেকে মোটরবাইক নিয়ে জঙ্গিপুরে এসেছিলেন নাজিম শেখ। বেলা ১১টা নাগাদ পুরসভার সামনে একটি এটিএম থেকে কড়কড়ে গোলাপি নোট তুলে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন তিনি। জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান, তৃণমূলের মোজাহারুল ইসলাম মনে করছেন, “আসলে, ছোট শহরে বেশি ব্যাঙ্ক থাকাতেই ভোগান্তি কমেছে।”
অথচ এক সময়ে বাম-তৃণমূল কে না এই নিয়ে কটাক্ষ করেছে! প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে জঙ্গিপুরের কংগ্রেস সাংসদ। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কগুলো ছিল বলেই এখন লোকে তার সুফল পাচ্ছে। যারা সে দিন সমালোচনা করেছিল, এখন তারা কী বলছে, জিগ্যেস করুন।’’
সিপিএম নেতারা প্রথম থেকেই প্রণববাবুর ব্যাঙ্ক খোলা নিয়ে নানা টিপ্পনী কেটে এসেছেন। সপ্তাহ দুয়েক আগেও ফরাক্কায় মহিলা সমাবেশে এসে সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট দাবি করেছিলেন, কয়েকটা ব্যাঙ্ক খোলা ছাড়া প্রণববাবু আর কিছু করেননি। তবে দলের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা কখনও ব্যাঙ্ক খোলার বিরোধিতা করিনি! বলেছি, পাশাপাশি অন্য উন্নয়নও করতে হবে।’’
ব্যাঙ্কে-ব্যাঙ্কে মানুষের মাথা কোটা শুরু হওয়া ইস্তক প্রায় সর্বত্র শিবির করে লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের জন্য টোকেন বিলি করছে তৃণমূল। তাতে শান্তি যেমন বজায় থাকছে, দলের জনসংযোগ তথা সাংগঠনিক ফায়দাও হচ্ছে। কিন্তু জঙ্গিপুরে তা কার্যত অর্থহীন হয়ে গিয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘দলের নির্দেশ মতো সব জায়গাতেই শিবির হচ্ছে। জঙ্গিপুরেও হয়েছে।’’ তার পরেই তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘তবে জঙ্গিপুরের মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান! প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে তাঁরা কৃতজ্ঞ থাকতেই পারেন।’’