BJP

বিজেপি-তে যোগ: শিরে সংক্রান্তি নিয়ে এখন অধীর অপেক্ষা মকর সংক্রান্তির

শোনা যাচ্ছে, নতুনদের দলে নেওয়ার জন্য পরিস্থিতি শিরে সংক্রান্তি পর্যায়ে পৌঁছলেও পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির জন্য অপেক্ষা করছে বিজেপি।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:৫৩
Share:

রাজনীতিতেও মকর সংক্রান্তির অপেক্ষা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

দৃশ্য ১: নবাগত প্রথম সারির বিজেপি নেতার অফিস। অনেক অনুগামী আসছেন-যাচ্ছেন। সকলেরই আব্দার, ‘‘দাদা, আপনাকে অনুসরণ করে বিজেপি-তে যোগ দিতে চাই।’’ দাদা বলছেন, ‘‘একটু অপেক্ষা কর। সংক্রান্তিটা কাটুক!’’

Advertisement

দৃশ্য ২: এক তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির বৈঠকখানা। চা-মুড়ি সহযোগে আড্ডা চলছে। বিধায়ক কথা বলছেন ফোনে। ওপারে কে জানা নেই। এপারের কথা, ‘‘এখনও কিছু পাকা করিনি। সংক্রান্তিটা কাটুক। তার পর ভাবব।’’

দৃশ্য ৩: তৃণমূলের এক যুবনেতা যোগ দিতে চান বিজেপি-তে। কিন্তু চান মকর সংক্রান্তিটা কাটিয়ে দিতে। হিতৈষীকে বলছেন, ‘‘আমরা এসব একটু মানি-টানি। পৌষ মাসে কোনও শুভকাজে হাত দিতে নেই। মকর সংক্রান্তির পর যোগ দেব বলেছি।’’

Advertisement

এই তিন দৃশ্য এবং কথোপকথনের মধ্যে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট— বঙ্গ রাজনীতির ক্যালেন্ডারে আপাতত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ১৪ জানুয়ারি। মকরসংক্রান্তি। বিভিন্ন স্তরের বিজেপি নেতানেত্রী এবং বিজেপি-তে যোগ দিতে ইচ্ছুকদের কথায় অন্তত তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। যে ইঙ্গিত বলছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘সন্ধিক্ষণ’ হয়ে উঠতে পারে পৌষের মাঘ মাসে পদার্পণ। মুখে কেউ স্বীকার করতে নারাজ। কিন্তু বিজেপি এবং তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, নতুনদের দলে নেওয়ার জন্য পরিস্থিতি শিরে সংক্রান্তি পর্যায়ে পৌঁছলেও পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির জন্য অপেক্ষা করছে বিজেপি। আবার অন্য দিকে, বিজেপি-তে যোগ দেওয়ায় ইচ্ছুকরাও সংক্রান্তি পার করার অপেক্ষায়। যা সিদ্ধান্ত তার পরেই। সেই জনশ্রুতি ঠিক হলে আগামী ১৪ জানুয়ারি সংক্রান্তির পর অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে বিজেপি-তে বড়সড় যোগদান হতে পারে।

কিন্তু মকর সংক্রান্তির মাহাত্ম্য কী? রাশিচক্রের বিচার অনুযায়ী এই দিনে সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে। সনাতন বিশ্বাসে মনে করা হয়, এই তিথিতে বাংলা বছরের ‘অশুভ’ পৌষ মাসের অবসান হয়। বাংলায় পৌষ সংক্রান্তি মানে পিঠে-পুলি। মকর সংক্রান্তি মানে গঙ্গাসাগর মেলা। কিন্তু গোটা দেশেই নানা উৎসব শুরু হয় ওই দিন থেকে। বিভিন্ন জায়গায় শুধু উৎসবের নাম আলাদা আলাদা। উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকা, ওডিশা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, অন্ধ্র, তেলঙ্গানা এবং কেরলে মকর সংক্রান্তি নামটিই চলে। পাশাপাশি স্থানীয় নামেরও প্রচলন রয়েছে। যেমন মধ্যপ্রদেশে সুকরাত বা বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের কোনও কোনও এলাকায় খিচড়ি পর্ব। তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, গুজরাতে উত্তরায়ন, অসমে ভোগালি বিহু, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও জম্মুতে লোহ্রি, কর্নাটকে মকর সংক্রমণ, কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত। হিন্দুধর্ম-প্রভাবিত অন্যান্য দেশেও এই সংক্রান্তি পালিত হয়। যেমন, নেপালে এই সময়ে মাঘে সংক্রান্তি পালিত হয়। তাইল্যান্ডে সোংক্রান, কাম্বোডিয়ায় মোহা সোংক্রান, মায়ানমারে থিংইয়ান, লাওস-এ এর নাম হল পি মা লো। সব মিলিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, হিন্দু বিশ্বাস মতে এই সংক্রান্তির পরেই আসে ‘শুভ সময়’।

হিন্দুত্বে প্রবল বিশ্বাসী বিজেপি-র কাছেও স্বাভাবিক ভাবেই এই দিনের মাহাত্ম্য ব্যাপক। দলের ‘প্রেরণাদায়ক’ সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-ও ঘটা করে এই দিনটি পালন করে। সঙ্ঘকর্তারা বলেন, এই সময় থেকে রাত ছোট হয়ে দিন বড় হতে শুরু করে। অর্থাৎ, অন্ধকার কমে বাড়তে থাকে আলোর দিন। সঙ্ঘের রীতি অনুযায়ী, এই দিনে ‘তিল-গুড়’ খাওয়া হয়। এর পিছনেও রয়েছে সাংগঠনিক ব্যাখ্যা। বলা হয়, ব্যক্তির প্রতীক ‘তিল’ সংগঠনের প্রতীক ‘গুড়’-এর মাধ্যমে শক্তিশালী হয়।

এখন প্রশ্ন, মকর সংক্রান্তিকে গুরুত্ব দিয়ে বিজেপি কি অন্য দলের ‘তিল’ এনে গেরুয়া গুড়ে মেশাতে চাইছে? একটা সময় পর্যন্ত রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকেই বাংলায় আসবেন। এখনও পর্যন্ত যা খবর, সেটা হচ্ছে না। করোনা-আক্রান্ত হওয়ার পরে নড্ডা কবে আসবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি। অমিত আসতে পারেন ১৯-২০ জানুয়ারি। ডিসেম্বরেও ১৯ এবং ২০ তারিখে অমিত বাংলায় ছিলেন। সেই সফরের প্রথম দিন শুভেন্দু অধিকারী-সহ এক ঝাঁক ভিন দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতা বিজেপি-তে যোগ দেন। আগামী সফরেও তেমনটাও হতে পারে বলেই দাবি রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের।

১৪ জানুয়ারি পৌষ মাসের শেষ। মকর সংক্রান্তি থেকে সাংস্কৃতিক বাংলার অঙ্গ গঙ্গাসাগর মেলা শুরু। রাজ্য রাজনীতিতে এখন জল্পনা— বিধানসভা নির্বাচনের বছর সেই দিন থেকেই কি রাজনৈতিক বাংলার অন্যতম অঙ্গ ‘যোগ-বিয়োগ’ মেলা বড় আকারে শুরু হতে চলেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন