জয়শ্রী টেক্সটাইলস। ফাইল চিত্র।
শ্রমিক এবং মালিক— দু’পক্ষের বিরোধের জেরে বন্ধই হয়ে গেল রিষড়ার জয়শ্রী টেক্সটাইলস। ফলে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠী পরিচালিত ওই কারখানার প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিকের। সোমবার সকালের শিফ্ট থেকে কারখানা ‘লক আউট’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। যদিও গোলমালের অভিযোগে সাসপেন্ড এবং ছাঁটাই হওয়া বেশ কিছু সহকর্মীকে কাজে ফেরানোর দাবিতে চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে শ্রমিকেরা ধর্মঘট করছিলেন। ফলে, ওই দিন থেকে উৎপাদন বন্ধই ছিল।
ওই কারখানার পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত রাজ্য সরকার। এ দিনই কারখানা কর্তৃপক্ষকে আলোচনায় ডাকেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা মন্ত্রীকে সমস্যার কথা জানিয়ে এসেছেন। কারখানার সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কারখানায় বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করব না। তাই ছাঁটাই বা সাসপেন্ড হওয়া কর্মীদের ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি ছেড়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কর্মীরা রাজি হলে ফের কারখানার দরজা খুলতে এবং বেতন বাড়াতে আমরা রাজি।’’
রঞ্জনবাবুর অভিযোগ, ধর্মঘটের তাঁদের ১৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ১০ কোটি টাকার রফতানির বরাতও হাতছাড়া হয়েছে। কর্মীদের উৎপাদনশীলতাও কম। যে কাজ সমতুল অন্য কারখানায় ৩০ জন কর্মী করে থাকেন, সেই একই কাজে এখানে ৫২ জন লাগে। ফলে, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। অভিযোগ মানেনি শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষের তুঘলকি আচরণেই কারখানার উৎপাদন কমছে। আইএনটিটিইউসি নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা অন্যায্য দাবি করিনি। তা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বিপদে ফেললেন।’’
গত ৩১ মে সন্ধ্যায় শ্রমিকদের সঙ্গে এক সুপারভাইজারের গোলমালকে কেন্দ্র করে কারখানা চত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। সুপারভাইজারকে মারধরের অভিযোগে এক শ্রমিক গ্রেফতার হন। পাঁচ শ্রমিককে সাসপেন্ড করে তদন্ত শুরু করেন কর্তৃপক্ষ। ৪ এপ্রিল থেকে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেন। ওই দিন আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা দাবি তোলেন, ওই সব শ্রমিক তো বটেই, গত বছর ছাঁটাই হওয়া ন’জন শ্রমিককেও কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে। এই শর্তে কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য শ্রম দফতরে একাধিক বৈঠক হলেও জট কাটেনি। গত শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আবেদন জানান কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা সাড়া দেননি। তার পরেই এ দিন ‘লক আউট’।
এ দিনই আবার শ্রীরামপুরের সিমলায় একটি বিস্কুট কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। সেখানে শ’দুয়েক শ্রমিক ছিলেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, কারখানায় লোকসান হচ্ছে। বাড়তি শ্রমিক বাদ দেওয়া প্রয়োজন। শ্রমিক-মালিকপক্ষ সমঝোতা হয়নি। তাই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত।