West Bengal SSC and TET Scam

ঘুম ভাঙে দেরিতে, ভালবাসেন খেতে, ৬৪ ঘণ্টায় সেই জীবনের কপালে জুটেছে রুটি-ঢ্যাঁড়সভাজা!

বিধায়কের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জীবন বরাবরই আরামপ্রিয়। একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠতেন। ঘুমোতেনও বেশি রাতে। জরুরি দলীয় কর্মসূচি ছাড়া কখনওই বাড়ির বাইরে থাকতেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বড়ঞা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:১০
Share:

জীবনকৃষ্ণ সাহা। নিজস্ব চিত্র।

বরাবরই শান্ত। শৌখিন স্বভাবের। ভালমন্দ খেতেও পছন্দ করতেন। কিন্তু গত ৬৪ ঘণ্টায় জীবনকৃষ্ণ সাহার যা পরিণতি হল, তা মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যেরা। ক্লান্ত। বিধ্বস্ত চেহারা। চিকচিক করছে চোখের কোণ। এমন অবস্থায় তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে সিবিআই গ্রেফতার করে নিয়ে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী টগরি সাহাও। কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ কোন জীবন! এই জীবনকে তো আগে কখনও দেখিনি।’’

Advertisement

বিধায়কের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জীবন বরাবরই আরামপ্রিয়। একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠতেন। ঘুমোতেনও বেশি রাতে। জরুরি দলীয় কর্মসূচি ছাড়া কখনওই বাড়ির বাইরে থাকতেন না। বেশি কথা বলতেন না প্রয়োজন ছাড়া। এমন শৌখিন স্বভাবের মানুষটিকে সিবিআই তল্লাশি শুরু হওয়ার পর থেকে কার্যত চিনতেই পারছিলেন না স্ত্রী। বড়ঞার বিধায়কের এক ছায়াসঙ্গীর কথায়, ‘‘ঘুমে ব্যাঘাত একেবারেই পছন্দ করতেন না দাদা! সেই দাদা ৬৪ ঘণ্টা ধরে প্রায় না ঘুমিয়ে ছিলেন।’’

ছায়াসঙ্গী জানান, গত দু’দিনে সকালে লিকার চা, দুপুরে একটু ডাল-ভাত আর রাতে একটি রুটি, সব্জি খেয়েছেন বিধায়ক। এই ছিল জীবনের তিন দিনের মেনু। তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার রাতে খেয়েছেন একটা রুটি আর আলুভাজা। রাতভর জেরা করা হয়েছে। সারা রাত একটুও ঘুমোতে পারেননি। শনিবার দুপুরে টকডাল আর আলুপোস্ত ভাত। রাতে একটা রুটি আর চালকুমড়োর তরকারি। ওই রাতেও জেরা হয়েছে। রাতে ৩টের পর ৫টা পর্যন্ত ঘুম। রবিবার দুপুরে অবশ্য মাছভাত ছিল। আর রাতে খেয়েছে রুটি আর ঢ্যাঁড়সভাজা।’’

Advertisement

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার থেকে টানা ৬৪ ঘণ্টা ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার ভোরে গ্রেফতার হয়েছেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। তার মাঝে তুমুল নাটকীয়তার সাক্ষী থাকল বড়ঞার আন্দি। জিজ্ঞাসাবাদ ‘এড়াতে’ পুকুরে দু’টি মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেওয়া, পাম্প বসিয়ে পুকুর ছেঁচে একটি মোবাইল উদ্ধার— অনেক কিছুই ঘটেছে। এর পর রবিবার রাতেই জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতারির প্রক্রিয়া শুরু করে সিবিআই। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছন কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও ৪ জওয়ান। রাত ২টো ৩৫ মিনিট নাগাদ কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থার ৪ জন উচ্চপদস্থ আধিকারিকও যান বিধায়কের বাড়িতে। সেখানে আরও এক দফা জীবনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ভোর ৪টে ৫০ মিনিটে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। সেই মেমোতে স্বাক্ষর করেন বিধায়কের স্ত্রী টগরি সাহা।

এর পর এর পর ভোর সওয়া ৫টায় জীবনকে নিয়ে দুর্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সেই সময় বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন টগরি। কেঁদেও ফেলেন। পরিবার সূত্রে খবর, স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ঠায় টিভির সামনে বসে রয়েছেন টগরি। জীবনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের লাইভ কভারেজ থেকে তা জানছেন তিনি। পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘বাড়ির কেউই এখন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না।’’

জীবন গ্রেফতার হওয়ার পর শাসক তৃণমূলকে বিঁধতে শুরু করেছে বিজেপি। মুর্শিদাবাদের বিজেপির বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির ভরকেন্দ্র মুর্শিদাবাদ। আর এই দুর্নীতি আবর্তিত হয়েছে জীবন সাহাকে কেন্দ্র করে। তাই তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে সহানুভূতির কোনও প্রশ্নই নেই।’’ এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘দল কাউকে অপরাধ করতে নির্দেশ দেয় না। তাই এতে দলের কোনও দায় নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন