Recruitment Scam

আদালতের নির্দেশে চাকরি ‘অনিশ্চিত’ এক মন্ত্রিকন্যার, তৃণমূলের অনেক নেতা-নেত্রীও চিন্তায়

যে ৩৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ শর্তসাপেক্ষে বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলায় সে তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী বুলু চিকবরাইকের মেয়ে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৭:৩১
Share:

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৩৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ শর্তসাপেক্ষে বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন ফাইল চিত্র।

ফের এক মন্ত্রিকন্যার চাকরি ‘অনিশ্চিত’ আদালতের নির্দেশে। কিছু দিন আগেই নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে চাকরি গিয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যার। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে ৩৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ শর্তসাপেক্ষে বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন, জলপাইগুড়ি জেলায় সে তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী বুলু চিকবরাইকের মেয়ে। চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তৃণমূলের এক নেতা, এক নেত্রী এবং দলের একাধিক নেতার আত্মীয়দের।

Advertisement

মালবাজারের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী রাঙামাটি চা বাগান এলাকার বাসিন্দা। তাঁর মেয়ে ২০১৭ সাল থেকে বাড়ির পাশেই রাঙামাটি চা বাগানের প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দুলাল দেবনাথের পুত্রের নামও তালিকায় রয়েছে। দুলাল তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের জেলা সভাপতি। নাম রয়েছে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের শিবম বাসুনিয়ার। শিবমের দুই আত্মীয়ার নামও রয়েছে। রয়েছে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বিমলেন্দু চৌধুরীর স্ত্রীর নামও। জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য গীতা দাস রাজবংশী চাকরি পেয়েছিলেন ২০১৪ সালের টেটে। তাঁর নামও তালিকায় রয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দল এখনও এ বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য বা পদক্ষেপের নির্দেশ দেয়নি।

বুলু চিকবরাইক বলেন, “মেয়ে দু-দু’বার রাজ্যের সিভিল সার্ভিসেস-এর লিখিত পরীক্ষা পাশ করে, মৌখিক পর্যন্ত পৌঁছেছিল। সে কারণে ওর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়। আর ৩৬ হাজার নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ নিয়ে আলাদা করে বলার নেই, হাই কোর্টের বিচারাধীন বিষয়।” বিমলেন্দু চৌধুরী বলেন, “সবাই যা করবে, তা-ই করব। রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করছে।” দুলাল দেবনাথের দাবি, “আমার ছেলের এমএড করা রয়েছে। সে চাকরি পাওয়ার যোগ্য। ও আর চাকরি করতে চাইছে না। তবে নিয়োগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাই না।” অন্য দিকে, শিবম বাসুনিয়ার বক্তব্য, “তালিকায় নাম থাকলে, সবাই যা করবে, আমিও করব।” তাঁর নাম যে তালিকায় আছে, সে কথা জানিয়ে গীতা দাস রাজবংশী বলেন, “একটা কর্মসূচিতে ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।”

Advertisement

আদালতের এই নির্দেশের পরে, জেলার একাধিক জায়গায় চাকরিপ্রাপকদের আক্রমণ করা শুরু হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এ ব্যাপারে জেলা কংগ্রেস সভাপতি ও শিক্ষক পিনাকী সেনগুপ্তের মন্তব্য, ‘‘এঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে, না দুর্নীতির কারণেই এঁরা চাকরি হারাতে চলেছেন, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। এঁদের সামাজিক ভাবে অসম্মান করা যেন শুরু না হয়।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আসল দোষীরা যেন শাস্তি পায়, সেটা দেখতে হবে।’’ নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডলের দাবি, ‘‘এ ক্ষেত্রে দোষ হচ্ছে সরকারের, দোষ ওদের পদ্ধতির। সুতরাং, এঁদের সামাজিক সম্মান রক্ষার দায়িত্বও রাজ্য সরকারকে নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন