কথার আশ্বাস, যাদবপুরে ঘেরাও উঠল

সেন্ট জেভিয়ার্সের মডেলে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই রাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংসদ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৩
Share:

দেড় দিন পরে কাটল অচলাবস্থা। পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা হবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির কাছ থেকে এই আশ্বাস পেয়ে ঘেরাও তুলে নিলেন পড়ুয়ারা।

Advertisement

অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল তৈরির সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিবাদে নেমেছেন পড়ুয়ারা। ঘেরাও হয়ে থাকা উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বারবার বলছিলেন, বিধানসভায় পাশ হওয়া আইন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের এক্তিয়ারই তাঁর নেই। অনুরোধ করেন, আন্দোলন তুলে নিন পড়ুয়ারা। তারপর আলোচনা করা যাবে। কিন্তু তাঁর কথায় কান দিচ্ছিলেন না ছাত্রছাত্রীরা। গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষই যে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে, তা রাজ্য সরকারকে জানানো হবে। এবং তার আগে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। এর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা) এবং আবুটা-ও এক যৌথ বিবৃতিতে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিল। এই আশ্বাস পেয়ে ঘেরাও তোলেন পড়ুয়ারা। কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন সোমাশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘আলোচনার আশ্বাস পেয়েছি। এটাই জয়।’’ রাত সওয়া একটায় ঘেরাও উঠে যায়।

সেন্ট জেভিয়ার্সের মডেলে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই রাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংসদ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সরকারি এই সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক বলে ঘোষণা করতে হবে। সন্ধ্যার পর থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুরাহা হয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: হাজির সুব্রতও, এর পরে শুভেন্দু

এ দিন আন্দোলন পদ্ধতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন উপাচার্য। অরবিন্দ ভবনের সামনে যে দণ্ডে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন হয়, সেই দণ্ডে ‘ইউনিয়ন চাই’ লিখে এক খণ্ড কাপড় বৃহস্পতিবার উড়িয়ে দিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। পাশাপাশি উপাচার্যের দফতরের বাইরে নানা স্লোগান যে ভাষায় তাঁরা লিখেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আপত্তিকর বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই। পরে অবশ্য সেই সব স্লোগানের কিছু অংশ তাঁরা মুছে দিয়েছেন। উপাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত পরিবেশ থাকুক, আমি তা-ই চেয়েছি। কিন্তু যে ভাষায় দেওয়ালে লেখা হয়েছে তাতে আমি দুঃখ পেয়েছি।’’ এ দিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। পঠন-পাঠনের ক্ষতি হচ্ছে। এক হাজার দিন আন্দোলন করেও লাভ হবে না।’’

রাজ্য সরকারের অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ তৈরির নির্দেশিকা নিয়ে প্রাক্তন ছাত্রনেতারা দ্বিধাবিভক্ত। ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি তাপস রায় বলেন, ‘‘বিধানসভায় আইন পাশ হয়েছে। সেই আইন মাফিক কোনও বিষয় বাস্তবায়িত করার বিরোধিতার মধ্যে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।’’ তবে এসএফআইয়ের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী মনে করেন, ‘‘স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এই সরকারের এক একটি দফতরে পরিণত করা হচ্ছে। ১৮ বছর হলে সাধারণ নির্বাচন ভোট দেওয়া যায়। অথচ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অরাজনৈতিক কাউন্সিলের কথা বলা হচ্ছে।’’ প্রাক্তন বাম ছাত্র নেতা সমীর পুততুণ্ডর বক্তব্য, ছাত্রদের রাজনীতি বিমুখ করার ফল মারাত্মক হবে।।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই সমর্থক পড়ুয়ারাও এ দিন ছাত্র কাউন্সিল তৈরির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মতামত জানতে ডিন অব স্টুডেন্টসের দফতরে প্রায় ছ’ঘণ্টা অবস্থান করেন। কর্তৃপক্ষ জানান, এ নিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আলোচনা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন