তৃপ্তির পানাপুকুর ঠেলে ভিলেন-বধের মন্ত্র

‘থ্রি ইডিয়টস’-এর বীরু সহস্রবুদ্ধে বা ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর ডক্টর আস্থানা নন। এই ‘মাস্টারমশাই’ ঠিক তাঁর নিজের মতো।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

ইনফোকমে বোমান।-নিজস্ব চিত্র

‘থ্রি ইডিয়টস’-এর বীরু সহস্রবুদ্ধে বা ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর ডক্টর আস্থানা নন। এই ‘মাস্টারমশাই’ ঠিক তাঁর নিজের মতো।

Advertisement

বৃহস্পতির সন্ধেয় ইনফোকম-আসরে যিনি জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলার ব্যাকরণটাই ভেঙেচুরে দিলেন। ‘শুভস্য শীঘ্রম’ না-ই ঘটতে পারে। বোমান ইরানির বার্তা, ‘‘দেরি হলেও শুরু করুন।’’

বাস্তবিক ৪০ পেরিয়ে ডাক্তারি কলেজের এক ‘বুড্ঢা’ প্রিন্সিপালের চরিত্রে যাঁর বাজিমাত, তিনি ছাড়া কে এ কথা বলার হক রাখেন! জন্মের আগেই বাপ-হারানো ছেলে। তোতলা। ‘এস’ বলতে পারতেন না বলে ভাল স্কুলে ভর্তিও কেঁচে যাচ্ছিল। আজকের ‘বখতিয়ার খিলজি’কে দেখে কে বুঝবে, ক্লাস সেভেনে উঠে প্রথম ভাল ভাবে তিনি কথা বলেন?

Advertisement

সেই মুখচোরা, লাজুক ছেলের বলিউড-জয়ের কাহিনিটাই তো মূর্তিমান প্রেরণার টেক্সটবুক। এ বি পি প্রাইভেট লিমিটেড-এর এই মঞ্চে বোমান সেই গল্পটাই বললেন। এবং সব থেকে বড় ভিলেনটাকেও চেনাতে কসুর করলেন না। বোমানের কথায়, ‘‘কমফর্ট জোনে ধাতস্থ হওয়ার থেকে বড় শত্রু কেউ নেই।’’

স্থিতাবস্থা তথা স্বাচ্ছন্দ্য তাঁর কাছে পানাপুকুর। তাতে মজলেই সব শেষ! হল ঘরভরা শিল্প, প্রযুক্তি, উদ্যোগী মহলের বিশিষ্টজন বিভোর হয়ে শুনছিলেন কথাগুলো। বোমান যেন তাঁদের জীবনটাও পড়ে শোনাচ্ছেন। সব মানুষেরই জীবনে একটা মুহূর্ত আসে, যখন পিঠটা দেওয়ালে ঠেকে যায়। বোমানের ভাষায়, ‘জিরো বাল্‌ব মোমেন্ট!’

পারিবারিক আলু চিপ্‌সের দোকান সামলে সন্তুষ্ট এই গেরস্ত মুম্বইকরের জীবনে সেই মুহূর্তটা আসে মধ্য তিরিশে। দু’বাচ্চা, বৌ নিয়ে প্রথমবার ছুটি কাটাতে উটি গিয়েছিলেন। হোটেলের ঘরে ঢুকে ওঁরা দেখলেন, আলো জ্বলছে না। ঘরের লোকের সামনে বোমান অপ্রস্তুতের একশেষ। ‘‘এমন একটা আলো না-জ্বলার মুহূর্ত কিন্তু সবার জীবনে থাকে। ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তটাও সেখান থেকে শুরু।’’

বোমানের ক্ষেত্রে এর পরেই ফোটোগ্রাফির পেশায় ঝাঁপিয়ে পড়া। তার পরে হঠাৎ এক বন্ধুর গুঁতোয় মঞ্চে উঠে বুঝে ফেলা, অভিনয়টাই তাঁর জীবন। স্কুল পাশের পরীক্ষায় টেনেটুনে ‘হাই থার্ড ক্লাস’ বোমান একদা হোটেলে ওয়েটারগিরিও করেছেন। তাঁর ঠাকুমা পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, সেরা ওয়েটার হতে হবে।

বোমান বলছিলেন, ‘‘কোনও কাজ, কোনও মানুষ, কোনও প্রোডাক্টই ছোট নয়। জীবনের সেরা মুহূর্তটা কীসে লুকিয়ে আছে কে বলতে পারে!’’ জীবনে বহু বন্ধুকেও পাশে পেয়েছেন বার বার। তাঁর স্ত্রী জেনোবিয়া দুঃসময়ে জাভেরী বাজারে বিয়ের গয়না পর্যন্ত বেচেছিলেন। তখন বোমানের ব্যাজার মুখ দেখে তিনিই শেখান, কষ্ট হলেও কোনও কোনও সময় হাসি ধরে রাখা জরুরি। এমন ভাব করো, গয়না বেচতে নয়, কিনতে এসেছো!

জীবনের কোনও অবস্থাই যে ভেঙে পড়ার নয়, তা বোঝাতেও রসবোধ তাঁর হাতিয়ার। ‘‘এই যে আমি নায়িকার বাপের পার্ট করি! সুন্দরীরা আমাকেই সব থেকে জোরে জাপ্টে ধরেন।’’ মুন্নাভাই-এ সেরা চরিত্রাভিনেতার স্বীকৃতি, একদিন আগে স্যুট জোগাড় করা, এবং মঞ্চে ওঠার সময়ে আছাড় খেয়ে ফের ওঠার গল্পের মধ্যেও যেন গভীরতর রূপক।

ঘটনাচক্রে এই সভার কয়েক ঘণ্টা পরেই ৫৭ পার করেছেন বোমান। ক’মাস আগে ঠাকুরদাও হয়েছেন। বক্তৃতা শেষে হেসে বললেন, ‘‘এখন ফিল্মে পার্ট করা বন্ধ রেখেছি। চিত্রনাট্য লেখায় হাত পাকাচ্ছি। দেখি পারি কি না!’’

ফের নতুন এক শুরুর মুখোমুখি প্রবীণ চিরতরুণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন