কথার পথ খুলে বাম দাবিতে দরাজ মমতা

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এবং হিডকোর কাছে এর মধ্যে একাধিক বার জমি নিয়ে দরবার করেছেন সিপিএম নেতারা। বিধানসভায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সুজনবাবু, শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য ও সিপিএম নেতা রবীন দেব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০২:৩৭
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে জ্যোতি বসুর নামে গবেষণা কেন্দ্রের জট কাটতে চলেছে।—ছবি পিটিআই।

বাম জমানার একেবারে শেষ দিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পরেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল তাঁর নামে গবেষণা কেন্দ্র গড়ার। নতুন সরকার আসার পরেই রাজারহাটে পাঁচ একর জমির জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মিটিয়ে দিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু আট বছরেও সে জমি সিপিএমের হাতে আসেনি। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে বসুর নামে কেন্দ্রের জন্য জমি-জট এ বার কাটতে চলেছে। সেই সঙ্গেই নবান্নে আন্দোলনের দায়ে বাইরে বদলি হওয়া সরকারি কর্মচারীদের কলকাতার কাছে ফিরিয়ে আনা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন পর্ষদে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের জায়গা দাওয়ার বাম দাবিও মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

রাজ্যে দীর্ঘ দিন মুখ্যমন্ত্রী ও সরকার পক্ষের সঙ্গে বিরোধী বামেদের আলোচনার পথ বন্ধ ছিল। নবান্নে এক বার ঘরছাড়া সমর্থকদের ফেরানোর দাবিতে বিমান বসুরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তার পরে একাধিক বার বাম নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবিদাওয়া জানাতে চাইলেও সুযোগ পাননি। এখন মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সিপিএম নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন এবং তাঁদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিচ্ছেন, তাতে রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা শুরু হয়েছে— তা হলে কি বিজেপির উত্থানের জেরে রাজ্যের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মমতা ও বামেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক আদানপ্রদানের দরজা খুলছে? শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থবাবু শুক্রবারই অন্তত বারতিনেক নিজের ঘরে কথা বলেছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে।

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এবং হিডকোর কাছে এর মধ্যে একাধিক বার জমি নিয়ে দরবার করেছেন সিপিএম নেতারা। বিধানসভায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সুজনবাবু, শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য ও সিপিএম নেতা রবীন দেব। মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তাঁদের জানান, রাজারহাটে বসুর নামাঙ্কিত কেন্দ্রের জন্য সিপিএম নেতারা যে জমির কথা বলছেন, তার একাংশ ঘিরে মামলা আছে। রাজারহাটেই অন্যত্র তাঁদের জমি দেখানো হবে। রবীনবাবু অবশ্য বৈঠকে বলেন, ওই জমি ঘিরে কোনও মামলা নেই। পরে সুজনবাবু বলেছেন, ‘‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ-এর জন্য ওই জমি পাওয়াই আমাদের প্রথম লক্ষ্য। মামলা আছে কি না, ভাল ভাবে খোঁজখবর করা হবে। একান্তই ওই জমি পাওয়া না গেলে সরকার বিকল্প জমি দেখাবে।’’

Advertisement

উন্নয়ন পর্ষদে তৃণমূলের নেতারা থাকলেও বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিরা কেন নেই, সেই প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তোলেন অশোকবাবুরা। তাঁরা উদাহরণ দেন, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের (এসজেডিএ) মাথায় পরাজিত তৃণমূল সাংসদ বিজয় বর্মণকে বসানো হয়েছে। কিন্তু শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, নকশালগুড়ির তিন বিধায়ক অশোকবাবু (সিপিএম), সুখবিলাস বর্মা ও শঙ্কর মালাকারকে (কংগ্রেস) কমিটিতে রাখা হয়নি। নেই সিপিএম পরিচালিত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতিও। মুখ্যমন্ত্রী পুরমন্ত্রীকে বলেছেন বিষয়টি দেখতে।

সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ ও যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরীকে সঙ্গে করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সুজনবাবুরা। মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে নবান্নে টিফিন বিরতির সময়ে মিছিল করায় ওই সংগঠনের ১৫ জনকে উত্তরবঙ্গ ও মুর্শিদাবাদে বদলি করা হয়েছিল। তাঁদের ধাপে ধাপে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কথা বলেছেন পার্থবাবুও। বিজয়বাবু পরে বলেন, ‘‘আমাদের সব দাবি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন