১৫০ বছর উপলক্ষে ফুল-সজ্জা কালকা মেলের।
নাম ছিল তার ইস্ট ইন্ডিয়ান মেল। জন্ম ১৮৬৬ সালে। অনেকে নামটাকে সংক্ষিপ্ত করে বলতেন, ‘আপার ইন্ডিয়া’। হাওড়া থেকে ছেড়ে যেত ওল্ড দিল্লি পর্যন্ত।
রেলের ইতিহাস বলছে, ইস্ট ইন্ডিয়ান মেল চালু হওয়ার দু’বছরের মাথায় শৈলশহর সিমলাকে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। ওই সময় ইন্ডিয়ার ভাইসরয় ল্যান্সডাউন আচমকাই নির্দেশ দেন, গ্রীষ্মে কলকাতায় না থেকে শৈলশহর সিমলায় গিয়ে দেশ চালাবেন তাঁরা।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (সেই সময়ের ভারতীয় রেল কোম্পানি) ওই নির্দেশ আর ফেলতে পারেনি। ব্যবস্থা করা হয় সিমলা পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবার। রেল কর্তারা ঠিক করেন, ইস্ট ইন্ডিয়ান মেলটিকেই দিল্লি থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে কালকা পর্যন্ত। ওই ট্রেনটিরই নাম পাল্টে নতুন নাম দেওয়া হয়, কালকা মেল। রেল কর্তারা বলছেন, সেই থেকে অবিরাম চলছে কালকা মেল।
পূর্ব রেলের দাবি, যদি প্রথম দিন থেকে ধরা হয়, তবে ১ জানুয়ারি ২০১৬ সে দেড়’শো বছরে পা দিল। এই নিয়ে শুক্রবার হাওড়া স্টেশনে একটি অনুষ্ঠানও করেছে পূর্ব রেল। এদিন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত নিজে হাওড়া প্ল্যাটফর্মে গিয়ে কালকার যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘যেহেতু ভাইসরয় নিজে চড়তেন এই ট্রেনে, তাই রেলের ট্রেন চিহ্নিতকরণ নম্বরের তালিকায় এই ট্রেনটিকেই ১ আপ ও ২ ডাউন করে রাখা আছে। ব্রিটিশ সরকার চলে যাওয়ার পরে ভারতীয় রেল কর্তারাও এই নম্বর পাল্টাননি। এখনও রেলের টাইমটেবিলে এই নম্বরটি দিয়েই কালকা মেলকে চিহ্নিত করা হয়।
ওই সময় আরও দুটি ট্রেন কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাওয়া-আসা করত। সেই দুটি ট্রেন হল, তুফান মেল ও পঞ্জাব মেল। কিন্তু তাহলে এত ঘটা করে কালকার জন্মদিন পালন করছে কেন রেল?
আসলে এই ট্রেনটিকেই ওই সময় রাজধানী এক্সপ্রেসের মত মর্যাদা দেওয়া হত। গ্রান্ডকর্ড লাইন (ভায়া গয়া) তৈরির পরে যাত্রা পথের সময় কমাতে এই ট্রেনটিকেই প্রথম ওই লাইন দিয়ে কালকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই রুটেই হাওড়া থেকে কালকা পর্যন্ত ১৭৪৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে।
রাজধানীর আগে এই ট্রেনটিই ছিল একমাত্র ট্রেন, যেটা প্রায় ২৪ ঘণ্টায় পৌঁছত দিল্লি। রেলের হেরিটেজ ট্রেনের তালিকাতেও রয়েছে এই ট্রেন। শুধু তাই নয়, রেলেরে প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, ‘‘এই কালকা মেলে ভাইসরয় চড়বেন বলে হাওড়া স্টেশনে (৮-৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে) ও কালকা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দু’টি ক্যাবওয়ে তৈরি করা হয়। যাতে ভাইসরয় গাড়িতে চড়ে এসে সোজা ট্রেনের কামরায় উঠতে পারেন।’’
রেল সূত্রের খবর, আগে ট্রেনটিতে ১০-১১টি কামরা লাগানো হত। সেটা বাড়তে বাড়তে এখন ট্রেনটিতে কামরার সংখ্যা হয়েছে ২৪টি। কালকা মেলের প্রথম থেকেই এত চাহিদা যে কলকাতা থেকে মোগলসরাই পর্যন্ত একটি অতিরিক্ত কামরা লাগানো হয়। শুরু থেকেই দূরত্ব ও যাত্রীদের সাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে মোগলসরাইতে ওই অতিরিক্ত কামরাটি কেটে ট্রেনটিতে জোড়া হয় প্যান্ট্রিকার। জোড়া হয় ডাক নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি রেলওয়ে মেল ভ্যান-ও (আরএমএস)। রেলের যে সব ট্রেনকে মেল বলা হয়, সেই ট্রেনগুলিতেই থাকে একটি করে মেল ভ্যান। কালকাকেও এই জন্য মেল বলা হয়।
ট্রেনটির এত ঐতিহ্যের প্রেমে পড়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ও। বাক্স রহস্য সমাধানে তাই সিমলার উদ্দেশে খোদ ফেলুদাকেও এই ট্রেনে চড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।