ক্ষতিগ্রস্থ ধানগাছ। —নিজস্ব চিত্র।
একে টানা বৃষ্টিতে বহু বীজতলা নষ্ট হয়েছে, তারপর বেশ কিছু জমিতে খোলা পচা রোগের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, কালনার বেশ কিছু ব্লকে এই রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জমিতে শুকিয়ে যাচ্ছে ধান গাছ। চাষিদের আশঙ্কা, রোগ ছড়িয়ে গেলে ধানে ক্ষতি কিছুতেই সামাল দিতে পারবেন না তাঁরা।
এ বছর আমন মরসুমের শুরুতেই চাষে বিপর্যয়ের মুখে পড়েন চাষিরা। জুলাই মাসের মাঝামাঝি যখন মহকুমার পাঁচ ব্লকের চাষিরা বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে লাগানোর কাজ করছেন তখনই শুরু হয় টানা বৃষ্টি। ফলে বেশির ভাগ বীজতলায় নষ্ট হয়ে যায়। বহু জায়গাতেই চড়া দামে ধানের চারা কিনে ফের চাষের কাজ শুরু করতে হয় চাষিদের। এরপরে মাসখানেক কাটতে না কাটতেই ফের খোলা পচা রোগের সংক্রমণে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চাষিরা। জানা গিয়েছে, কালনা ১, ২, পূর্বস্থলী ১ এবং মন্তেশ্বর ব্লকের বহু জমিতেই খোলা পচা রোগ দেখা দিয়েছে। রোগ ছড়িয়েছে গলসি ১ ব্লকেও। চাষিদের দাবি, রোগের প্রকোপে গাছের গোড়ার দিকের পাতার খোলায় জলভেজা দাগ দেখা দিচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এই দাগ বাদামী বর্ণ ধারণ করছে। এরপরে ধীরে ধীরে জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ। কালনার ধান চাষি রমেন শীল বলেন, ‘‘চাষে পরপর মার খাচ্ছি। বৃষ্টির জন্য অতিরিক্ত খরচ করে জমিতে ধান চারা লাগাতে হয়েছে। এ এবার খোলাপচা রোগে গাছ মরতে বসেছে। জানি না শেষ পর্যন্ত কি হবে।’’ মন্তেশ্বরের ধান চাষি গোবিন্দ ঘোষও জানান, ধান গাছের ফুল এবং থোর আসার সময়ে এই রোগ দেখা দিলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। ফলে ফলন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
তবে মহকুমা কৃষি দফতরের দাবি, কয়েকটি ব্লক থেকে এই রোগের কথা জানা গেলেও এখনও তা বড় আকার নেয়নি। তবে চাষিদের ক্ষতিকারক এই রোগ নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
কি ভাবে ছড়ায় এই রোগ?
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এটি মূলত ছত্রাক ঘটিত রোগ। রাতে তাপমাত্রা বাড়লে, জমিতে জল বেশি থাকলে, জমি আগাছা মুক্ত না করলে, জমির আলে আগাছা থাকলে এবং জমিতে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। রোগ দেখা দিলে দ্রুত প্রতিকার করলে সুরাহা মিলবে বলেও তাঁদের দাবি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রথমেই জমিকে আগাছামুক্ত করে তুলতে হবে। বন্ধ করতে হবে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের প্রয়োগ। এরপরে প্রতি বিঘা জমিতে সাত কেজি করে পটাশ প্রয়োগ করলে ফল মিলবে। এ ছাড়া আল কেটে জমি থেকে জল বের করে দিতে হবে। একই সঙ্গে ধান গাছের গোছা হাতে করে ফাঁক (পাশঠেলা) করে দিতে হবে। ওষুধ হিসাবে প্রোপিকোনাজোল, ট্রাইসাইক্লাজোল, ভ্যালিডামাইসিন, কার্বেনডাজিম, পেনসাইকিউরিন জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। মহকুমা কৃষি দফতরের এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে এই রোগ বিভিন্ন জমিতে দেখা গেলেও বড় আকার নেয় নি। তবে বিপ্পজনক এই রোগটিকে নিয়ে চাষিদের সতর্ক থাকতে হবে।’’ পার্থবাবুর দাবি, মাজরা পোকা এবং টুংরো রোগ আক্রান্ত গাছে এই রোগের সংক্রমণ বেশি হয়।