কামদুনি মামলা

হুমকির সুর উধাও, চোখের জলই আশ্রয় ছয় আসামির

দাপুটে হুমকি বদলে গেল চোখের জলে! দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার মৃতার মা আর ভাইয়ের দিকে চটি হাতে তেড়ে গিয়েছিল আনসার আলি। ঠান্ডা গলায় ‘তোদেরও ওই ভাবে মারব’ বলে হুমকি দিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

দাপুটে হুমকি বদলে গেল চোখের জলে!

Advertisement

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার মৃতার মা আর ভাইয়ের দিকে চটি হাতে তেড়ে গিয়েছিল আনসার আলি। ঠান্ডা গলায় ‘তোদেরও ওই ভাবে মারব’ বলে হুমকি দিয়েছিল। শুক্রবার দিনভর শুনানির সময়েও মৃতার ভাইকে ঠান্ডা দৃষ্টিতে মেপে যাচ্ছিল সে। মাঝেমধ্যে চুলকে নিচ্ছিল মাথা, গাল।

কিন্তু শুনানি শেষ হতেই বদলে গেল আনসারের চাহনি। এজলাস থেকে বেরনোর সময় দু’হাত দিয়ে চোখ মুছে নিল সে। কোনও দিকে না তাকিয়ে উঠে পড়ল প্রিজন ভ্যানে।

Advertisement

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নির্বিকার মুখে সওয়াল-জবাব শুনছিল সইফুল আলি মোল্লা আর আমিন আলিও। এজলাস থেকে বেরনোর সময় তাদের চোখেও জল। ফাঁসি না হলেও অন্তত কুড়ি বছরের কারাদণ্ড যে হচ্ছেই, সেটা তো জেনেই গিয়েছে তিন জন। কারণ ৩০২, ৩৭৬-এর মতো ধারায় তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তার ন্যূনতম সাজাই ২০ বছরের কারাদণ্ড। তবে সাজা ঘোষণা হওয়ার আগেই আসামিদের আইনজীবীরা সাজার পরিমাণ নিয়ে শুনানি চেয়েছিলেন। বিচারক সঞ্চিতা সরকার তাতে সম্মত হওয়ায় এ দিন সেই শুনানি চলে।

এজলাসের ভিতরে পরিবারকে দেখতে পেয়ে ভেঙে পড়েছিল আমিনুল ইসলাম, ভোলানাথ নস্কর এবং শেখ ইনামুল ইসলাম নামে বাকি তিন আসামিও। সওয়াল শেষে এজলাস ছেড়ে বেরনোর সময়েও তাদের কান্না থামেনি। ওই তিন জন যে ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাতেও কমপক্ষে ২০ বছরের কারাবাস হওয়ার কথা। তা যে যাবজ্জীবনেরই সামিল, সেটা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝে গিয়েছে দোষীরা। আজ, শনিবার দ্বিতীয় দফার শুনানি হবে। শুনানি শেষে হতে পারে বহু-প্রতীক্ষিত সাজা ঘোষণা।

শুক্রবার আদালত চত্বরে অবশ্য আগের দিনের মতো ভিড় ছিল না। কামদুনির প্রতিবাদীদের এ দিন দেখা যায়নি। মৃতার ভাই এসেছিলেন কেবল। আর এজলাসে হাজির ছিলেন আসামিদের পরিবারের লোকেরা। পরিজনের ভবিতব্য বুঝতে পেরে সারাক্ষণই কেঁদে গিয়েছেন তাঁরা।

সুযোগ পেতেই কোলের সন্তানকে বেঞ্চে বসিয়ে কাঠগড়ার দিকে এক বার দৌড়ে গেলেন আমিনুলের স্ত্রী। এজলাসে বসে টানা কেঁদে যাচ্ছিলেন আমিন আলির বোন। বলছিলেন, ‘‘কী যে হয়ে গেল আমাদের সঙ্গে!’’ এজলাসের বাইরে থেকে উঁকি দিচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। ‘‘আপনি কার বাড়ির লোক?’’ প্রশ্ন করতেই মুখ চাপা দিলেন তিনি। প্রশ্নের উত্তর দিলেন না অবিকল আনসার আলির মতো দেখতে এক ব্যক্তিও।

বেলা পৌনে দু’টো নাগাদ কাঠগড়ায় নিয়ে আসা হয় ছ’জন আসামিকে। শুনানির শুরুতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বিচারকের কাছে অনুরোধ করেন, সওয়ালের জন্য রায়ের কপিতে কী রয়েছে তা দেখা জরুরি। ফৌজদারি কার্যবিধিতে এ ব্যাপারে সম্মতি দেওয়া রয়েছে বলেও তাঁরা জানান। বিচারক জানান, শাস্তি ঘোষণার আগে রায়ের কপি তিনি দিতে পারেন না। সরকারি কৌঁসুলি দীপক ঘোষ ও অনিন্দ্য রাউতও রায়ের কপি দেখতে না দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেন।

পরে বিচারক জানান, তিনি কিছু ক্ষণের জন্য রায়ের কপি দেখতে দিতে পারেন। তবে তা রুদ্ধদ্বার কক্ষে দেখতে হবে। তার ফলে দু’পক্ষের আইনজীবী ছাড়া বাকি সবাইকে এজলাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে তিনটেয় আইনজীবীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় রায়ের কপি।

বিকেল সাড়ে চারটেয় ফের এজলাসে ওঠেন বিচারক। দোষীদের তিন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি, রাজদীপ বিশ্বাস ও সঞ্জীব দাঁ এ বার আদালতে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ের কপি দাখিল করে জানান, এ দেশে শাস্তির মেয়াদ সংক্রান্ত অভিন্ন নীতি নেই। তাই নির্দিষ্ট দোষে ফাঁসির আদেশ দিতেই হবে, এমন কোনও বাঁধাধরা ব্যাপার নেই।

আইনজীবীরা আরও বলেন, একটি মামলায় বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করেছিল। অন্য একটি মামলায় তিন বছরের একটি মেয়েকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। কিন্তু দু’টি ক্ষেত্রেই শীর্ষ আদালত ফাঁসির সাজা দেয়নি। আইনজীবীদের বক্তব্য, দোষীদের অধিকাংশই সংসারে একমাত্র রোজগেরে। প্রায় সকলেরই শিশুসন্তান ও স্ত্রী রয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই শাস্তির মেয়াদ ঠিক করুক আদালত।

বিচারক জানান, আজ, শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিনি দোষী ও সরকার পক্ষের সওয়াল শুনবেন। তার পরে কামদুনি মামলায় শাস্তি ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাননি বিচারক। কী শাস্তি হয়, রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় কামদুনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন